ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ফাইনাল আর সম্ভব নয়!

ব্রাজিল আছে কক্ষপথেই। প্রথম ম্যাচটা সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করলেও পরের দুটো জিতে ঠিকই ‘ই’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় পা রেখেছে তিতের শিষ্যরা। গোল বাধিয়েছে আর্জেন্টিনা। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে তারা ‘ডি’ গ্রুপ থেকে রানার্স আপ হয়ে পা রেখেছে নক আউট পর্বে। ফাইনালের দিকে এ দুই দলের ছুটে চলা ট্রেন তাই ফাইনালের আগেই এসে পৌঁছতে পারে একই জংশনে! যেখান থেকে একজনই যেতে পারবে শেষ গন্তব্যে, অন্য দলকে নিতে হবে বিদায়। নাটকীয় ও ঘটনাবহুল গ্রুপ পর্বের পর বিশ্বকাপের এখন যে চেহারা, তাতে ১০ জুলাইয়ের সেমিফাইনালেই দেখা হয়ে যেতে পারে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। ১৯৯০ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে তুরিনে, শেষবারের মতো বিশ্বকাপে দেখা হয়েছিল পেলে ও ম্যারাডোনার দেশের।

গ্রুপ নয়, একেবারে হাফ অব ডেথ! এভাবেই সংজ্ঞায়িত করেছে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা। শেষ ষোলো থেকে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে ফাইনালের পথে যাওয়ার যে পথটা, তার একটা পাশে উরুগুয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের সঙ্গে ইংল্যান্ড-বেলজিয়ামের কোনো একটি দল। অন্য অর্ধে স্পেন, রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ইংল্যান্ড অথবা বেলজিয়াম। আর থাকবে জাপান/কলম্বিয়া/সেনেগাল। অর্থাৎ লুই সুয়ারেস, লিওনেল মেসি, নেইমার, আন্তোয়ান গ্রিয়েজমান, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোরা ফাইনালের ওঠার রাস্তায় একে অন্যের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন। এই দলে নিশ্চিতভাবেই হ্যারি কেইন এবং রোমেলু লুকাকুর কেউ একজন আসছেন, ফলে লড়াইটা হবে আরো কঠিন! অন্য অর্ধে স্প্যানিশদের সামনে কোয়ার্টার ফাইনালে বড় বাধা বলতে ক্রোয়েশিয়া। এই ঘাট যারা পার করতে পারবে, তাদের জন্য সেমিফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, নয়তো ইংল্যান্ড। হতে পারে সুইডেন-সুইজারল্যান্ডের কোনো দলও।

সেই মৃত্যু উপত্যকায় প্রথম লড়াই ফ্রান্স-আর্জেন্টিনার। পরের ম্যাচে মুখোমুখি বিশ্বকাপের প্রথম চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে আর ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। অর্থাৎ দেম্বেলে-এমবাপ্পেরা অথবা মেসি-আগুয়েরোরা, কেউ থাকবেন এবং কেউ বিদায় নেবেন। শুধু এখানেই শেষ নয়। ফরাসিদের ‘গিলোটিন’ যদি এড়াতে পারে হোর্হে সাম্পাওলির দল, তাহলে পরের প্রতিপক্ষ হতে পারে রোনালদোর পর্তুগাল। যদি তারা জিততে পারে উরুগুয়ের বিপক্ষে। গ্রহের সেরা ফুটবলার আর সেরা স্কোরার মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন কোয়ার্টার ফাইনালেই। ব্রাজিলের শেষ ষোলোর প্রতিপক্ষ মেক্সিকো। নামটায় চাপ নেই বটে, তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে তারাও যে ঘাম ছুটিয়ে দেওয়ার মতো সেটা বোঝা গেছে গ্রুপ পর্বেই। মেক্সিকানদের ‘অ্যাজটেক অ্যাটাক’ বাঁচিয়ে ব্রাজিল যদি শেষ আটে উঠে যায়, তাহলে অভ্যর্থনায় থাকবে কলম্বিয়া/ইংল্যান্ড/বেলজিয়ামদের কোনো এক দল। ২০১৪ বিশ্বকাপের মতো আবারও যদি কলম্বিয়ার সামনে পড়ে ব্রাজিল, তাহলে শুধু জেতা নয়; ১১ জন অক্ষত বেরিয়ে আসাটাও হবে লক্ষ্য। কামিলো সুনিগার মারটা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি নেইমার! তা না হয়ে যদি বেলজিয়াম হয়, বিপদ কমবে না। আসরের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দলগুলোর একটি বেলজিয়াম, দুই ম্যাচেই করেছে ৮ গোল। ইংল্যান্ডও তাই। পর্তুগালের খপ্পর থেকে যদি বেঁচে বের হয়ে আসতে পারেন মেসিরা আর ব্রাজিলও যদি শেষ আটের বেড়া ডিঙাতে পারে, তাহলে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়ে যাবেন মেসি-নেইমার। আগুয়েরো বনাম জেসুস, মেসি বনাম পাউলিনিয়ো-কৌতিনিয়ো, নেইমার-থিয়াগো সিলভা বনাম আনহেল দি মারিয়া-জিওভান্নি লে সলসো; হয়ে যাবে সেমিফাইনালেই। যাকে বলে একেবারে সুপার ক্লাসিকো!

অঘটন আর নাটকীয়তার বিশ্বকাপ রাশিয়া এই মানচিত্রই এঁকে দিয়েছে। এই পর্যায় থেকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিজ নিজ খেলায় জিতলে দেখা হবে ১০ জুলাই, সেন্ট পিটার্সবার্গে। এরপর কারো স্বপ্ন, কারো দুঃস্বপ্ন!