ব্রুনেইয়ের সঙ্গে এলএনজি ও এলপিজি সরবরাহসহ ৬ সমঝোতা সই
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ দেশ ব্রুনেইয়ের সঙ্গে ছয়টি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও লিকুইড পেট্রেলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতাগুলো সই করা হয়। পাশাপাশি কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ দিতে কূটনৈতিক নোট বিনিময় হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
সোমবার ব্রুনেইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বলকিয়ার সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমানের চেরাদি লায়লা কেনচানায় রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও মিলিত হন শেখ হাসিনা।
সই হওয়া সমঝোতাগুলো হয়েছে কৃষি, মৎস্য সম্পদ, প্রাণিসম্পদ, শিল্প ও সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং এলএনজি ও এলপিজি সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে। এছাড়া কূটনৈতিক নোট বিনিময়ের ফলে দুই দেশের কূটনীতিবিদ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই দুই দেশে যাতায়াত করতে পারবেন বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন।
ব্রুনেইয়ের সুলতানের আমন্ত্রণে তিনদিনের সরকারি সফরে গতকাল রবিবার দেশটির রাজধানী বন্দর সেরি বেগওয়ানে পৌঁছান শেখ হাসিনা। এদিন সকালে তিনি সুলতানের সরকারি বাসভবনে পৌঁছালে সুলতান বলকিয়ার ও যুবরাজ হাজী আল মুহতাদি বিল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ওনারা (সুলতান ও যুবরাজ) রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর ভিজিটিং গেস্ট আসেন। কিন্তু উনারা প্রটোকল ভেঙে একেবারে করিডোরে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন।’
রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সুলতানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারকে সই ও কূটনৈতিক নোট বিনিময় হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান। পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৮৪ সালে যুক্তরাজ্যের উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া ব্রুনেই দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের বড় মজুদের ওপর নির্ভর করে। দেশটি বর্তমানে প্রতিদিন ২৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন ঘন মিটার এলএনজি উৎপাদন করছে। এর বেশিরভাগটারই ক্রেতা জাপান।
ব্রুনেই ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমানে ১০ লাখ ডলারের মতো। তবে বিশ্বের পঞ্চম ধনী এই দেশ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে পারে বলে আশা সরকারের। এছাড়া এলএনজি ও এলপিজির বিষয়ে ব্রুনেইয়ের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়দী চুক্তির মাধ্যমে দেশটি থেকে এলএনজি ও এলপিজি আমদানির পথ সুগম হবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে।
এদিকে ব্রুনেই পৌঁছে দ্য এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের বলরুমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকালে একই হোটেলে ব্রুনেই ও বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে তিনি জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন করবেন এবং সেখানে আসরের নামাজ আদায় করবেন। এরপর সুলতানের সরকারি বাসভবনে প্রধানমন্ত্রীর সন্মানে দেওয়া ভোজসভাতেও যোগ দেবেন তিনি।
আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে ব্রুনেইয়ের রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা জালান কেবাংসানে বাংলাদেশ হাই কমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন শেখ হাসিনা। পরে রয়েল রেজালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এদিন স্থানীয় সময় বিকাল পাঁচটায় ঢাকার উদ্দেশে ব্রুনেই ছাড়বেন শেখ হাসিনা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন