ভাঙারিতেই চলে কুমিল্লার ছয়শ’ পরিবারের ভরণপোষণ

হাতে প্লাস্টিকের বস্তা, অনেকের সাথে থাকে ভ্যান। সারাদিন এমন বহু মানুষকে দেখা যায় শহরের আনাচেকানাচে। তাদের একমাত্র কাজ ফেলনা জিনিস ক্রয় বিক্রয় বা খোঁজা।

কুমিল্লায় বসবাসকারী প্রায় ছয়শ মানুষের আয়ের উৎস ফেলনা জিনিসপত্র কিংবা ভাঙারি। এসব ব্যবসায়ীদের বলা হয় ভাঙারি বিক্রেতা। যাদের পেশা বাসা বাড়ির পুরোনো জিনিসপত্র কেনা বা রাস্তা ও ময়লার বাঘাড়ে ফেলনা জিনিসপত্র খুঁজে বিক্রি করা। শহর ছেড়ে প্রতিদিন অনেকে গ্রামের পথেও পাড়ি দেন ফেলনা জিনিসের খোঁজে।

কুমিল্লার স্থানীয় ভাঙারি জিনিস বিক্রেতা শাকিল বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে শহরের হাঁটা শুরু করি। বাসাবাড়ি থেকে জিনিস পত্র কিনি। সারাদিন যা পাই তা নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরি। আমি ও আমার সাথের প্রায় ১৫-২০ জন থাকি একটা বস্তিতে। আমার সাথের অনেকে থাকেন শহরের পুরোনো নিম্নমানের বাড়িগুলোর একটিতে। আবার অনেকে রাস্তা বা গলির কোণের কোন ফ্ল্যাটের নিচে শুয়ে কোনোমতে রাত পার করেন। তবে বাসস্থানে ফেরার আগেই বিক্রি করি সারাদিনের সব জিনিসপত্র।

তিনি আরও জানান, অনেকে বেশি টাকা একবারে পাওয়ার উদ্দেশ্যে অনেক দিনের অর্জিত মালামাল একদিনে বিক্রি করেন। অনেকদিনের মালামাল বিক্রির অর্থ একসাথে নিয়ে থাকেন বা প্রতিদিনের টাকা আলাদাভাবেও নিতে পারে৷ যার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই তাদের মালিকের সাথে চুক্তি করা থাকে। এই মালামাল বিক্রির টাকাতে চলে একজন হকারের সংসার।

হাজী তৈয়র আলী নামে চকবাজারের এক ভাঙারি দোকানি বলেন, আমার দোকানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন হকার প্রতিদিন মালামাল নিয়ে আসে। অনেকে শহরের বাইরেও যায়। অনেক মহিলারাও আসেন। তারা আমার কাছে মালামাল বিক্রি করেন। আমি মালগুলো বড় বড় ফ্যাক্টরিতে পাঠাই।

কুমিল্লা শহরের অবস্থানরত এমন ছয়শ মানুষের আয়ের পথই ফেলনা জিনিস বিক্রি করা। দিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করা মানুষগুলোর অনেকেই কুমিল্লার বাইরের জেলা উপজেলা থেকে এসে কুমিল্লা শহরে হকারি ব্যবসায় জড়িত। তবে কুমিল্লার স্থায়ী ভাঙারি বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি। এসব তথ্য জানান কুমিল্লা পুরাতন লৌহ ভাঙারি মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম।

তিনি আরও জানান, কুমিল্লা শহরে প্রায় একশত বিশটি ভাঙারি দোকান রয়েছে। এই একশত বিশটি দোকানেই ফেলনা মালামাল বিক্রি করেন হকাররা। এই মালামালগুলোর মধ্যে রয়েছে অব্যবহৃত প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, লোহা ও স্টিলের জিনিসপত্র, আবার রয়েছে রাবার ও কাঁচের জিনিসপত্র। ফেলনা এই মালামালগুলো পাইকারি দরে কিনে আবার বিভিন্ন প্লাস্টিক কোম্পানি ও জ্বালানির কাজে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয় বিভিন্ন মিল ও ফ্যাক্টরিতে। আবার অনেক প্লাস্টিক দোকানি নিজেই ফেলনা প্লাস্টিক জিনিসপত্র দিয়ে নতুন করে প্লাস্টিক জিনিসপত্র তৈরি করেন।