ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থার উচ্চপদে চাকরিরত বাংলাদেশি!
ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থার উচ্চপদে চাকরিরত বাংলাদেশি! এই তদন্তে নেমেছে সিবিআই। প্রায় তিন দশক ধরে তিনি এদেশে কর্মরত। তা-ও আবার কেন্দ্রীয় সংস্থার উচ্চপদে। অথচ অভিযোগ, তিনি নাকি ভারতীয় নন। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তে নেমেছে সিবিআই।
গত ৩০ জুন ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির তিনটি ধারা, দুর্নীতি দমন আইনের দু’টি এবং নাগরিকত্ব আইনের একটি ধারায় মামলা শুরু করেছে তারা। বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা আধিকারিক শ্যামলেন্দু ভৌমিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথিতে (এনআইএইচ) কর্মরত। বেহালার বাসিন্দা তিনি।
‘এবেলা’র হাতে থাকা নথি বলছে, গত ১২ জুন এনআইএইচের এক কর্তা সিবিআইকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে কলকাতার রসা রোডের এক বাসিন্দা আয়ুষ মন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করেছিলেন, শ্যামলেন্দু আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা।
তিনি রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদনও করেননি। অথচ ভারতে আসার পর ১৯৮৩ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি হিন্দুস্থান পার্কের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের আঞ্চলিক দফতরে করণিক হিসাবে যোগ দেন।
তৎকালীন অবিভক্ত ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ ছিল তাঁর কাছে। ওই অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালের এপ্রিলে তিনি এনআইএইচের জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। যদিও রসা রোডের ওই বাসিন্দার দাবি ছিল, ওই পদের জন্য অ্যাকাউটেন্সিতে স্নাতক হওয়া আবশ্যক।
কিন্তু শ্যামলেন্দু আদতে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের স্নাতক। পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতাও তাঁর ছিল না। ২০০২ সালের অক্টোবরে তিনি অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। পরে ‘নিয়ম বহির্ভূত’ভাবে তাঁকে সংস্থার অফিস সুপারিনটেনডেন্ট করা হয়।
ওই চিঠি পাওয়ার পর এনআইএইচের তৎকালীন ডিরেক্টর সংস্থার চিফ ভিজিল্যান্স অফিসারকে (সিভিও) অভিযোগের তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ৯ মে সিভিও তাঁর তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে লেখা হয়, শ্যামলেন্দুর পেশ করা নথি পরীক্ষা করা হয়েছে। এবং তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরই সংস্থার ডিরেক্টর গোটা ঘটনার বিবরণ দিয়ে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার সল্টলেক কার্যালয়ে তদন্তের আর্জি জানিয়ে চিঠি লেখেন।
সিবিআইয়ের এফআইআরে (এফআইআরের প্রতিলিপি ‘এবেলা’র কাছে রয়েছে) লেখা হয়েছে, ‘ভিজিল্যান্স তদন্তে প্রকাশ, শ্যামলেন্দু ১৯৮৩ সালের ২৩ মার্চ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে পাওয়া ‘সার্টিফিকেট অফ রেজিস্ট্রেশনে’ নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করেছিলেন।
কিন্তু সার্টিফিকেট পাওয়ার আগে (১৯ জানুয়ারি, ১৯৮৩) তিনি কাজে যোগ দেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের কার্যালয়ে কাজে যোগ দেওয়ার সময় শ্যামলেন্দু নিজেকে শ্যামনগরের বাসিন্দা বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বায়োডেটা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তিনি বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে ১৯৭৫ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন।
১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৮১ সালের অগস্টে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের স্নাতকস্তরের সাপ্লিমেনটারি পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। অর্থাৎ ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশে ছিলেন।’
এফআইআরে এ-ও লেখা হয়েছে, ‘শ্যামলেন্দুর সার্টিফিকেট অফ রেজিস্ট্রেশনে তাঁর জন্মস্থলের জায়গায় লেখা রয়েছে বাংলাদেশের বেগমগঞ্জ থানা এলাকার চৌমুহানির নাম। আর স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে লেখা হয়েছে বেহালার জয়শ্রী পার্ক। কিন্তু রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর ২০১৪ সালের মার্চে একটি চিঠিতে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য শ্যামলেন্দুর কোনও আবেদনপত্রের খোঁজ তারা পায়নি।’
শ্যামলেন্দুকে গত বুধবার ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ফোনে কিছু বলা যাবে না। সল্টলেকে এনআইএইচের অফিসে এলে আপনি যা জানতে চাইছেন, সেই সম্পর্কে কিছু কাগজপত্র দেখাব।’’
কিন্তু শুক্রবার দুপুরে এনআইএইচের দফতরে গিয়ে দেখা করলে তিনি তখন বলেন, ‘‘আমি সরকারি কর্মচারী। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কিছুই বলতে পারব না।’’ সোমবার আবার তাঁকে সিবিআইয়ের এফআইআর সম্পর্কে টেক্সট মেসেজ করা হয়েছিল। রাত পর্যন্ত জবাব মেলেনি।-এবেলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন