ভারতের সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়ায় নৌবন্দর চালু হচ্ছে রাজশাহীতে
ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে রাজশাহীতে একটি নৌবন্দর চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে পদ্মা নদী হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা হবে। শিগগিরই এই পথে পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যের চালান যাবে।
এজন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক গোদাগাড়ীর সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন।
সোমবার তিনি গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর স্পিড বোটে তিনি পদ্মা নদীর ভারতীয় সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত দেখে আসেন। পরে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ পদ্মা নদীর এই নৌপথে বাণিজ্য চালুর বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই পরীক্ষামূলক চালান পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। বিআইডব্লিউটি’র কর্মকর্তারা এখন নৌপথটির অবকাঠামো পর্যালোচনা করছেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, এই নৌপথটি চালু হলে ভারতের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য যোগাযোগ আরও সহজ হবে। কেননা নৌপথে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যায়।
এদিকে, রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটারের একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। এখন নতুন পথটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্য চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
এই পথের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। অনেকটা আড়াআড়িভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দেবে পণ্যবাহী নৌযান। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি নৌযানে ২০০-৩০০ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে।
আর বর্ষা মৌসুমে নাব্যতা বেশি থাকলেও প্রমত্তা পদ্মায় স্রোত বেশি থাকে। তখন অবশ্য পণ্য পরিবহন কিছুটা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে গোদাগাড়ী এলাকায় একটি শুল্ক কার্যালয় চালুর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় বড় প্রকল্পে মুর্শিদাবাদের ‘পাকুর পাথর’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বেশ উন্নতমানের পাথর। এখন সড়কপথে পাথর আমদানি করতে খরচ বেশি পড়ছে। গোদাগাড়ী-মায়া নৌপথটি মূলত পাকুর পাথর আমদানিতে বেশি ব্যবহার হবে।
নদীপথ পরিদর্শন শেষে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে নৌপথ চালু করলে দুই দেশই উপকৃত হবে। আজকে আমরা নদীর নাব্যতাসহ সবকিছু দেখে গেলাম। খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। আমরা এক মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এই নৌপথ চালু করতে চাই।
উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এক সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহিদুল ইসলাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, একসময় গোদাগাড়ী দিয়েই ভারতের সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। সেটা অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার সেটি চালু হলে খুব ভালো হবে।
তিনি বলেন, আগে এই পথে পাটজাত পণ্য ভারতে যেত। আবারও সেসব পণ্য পাঠানো যাবে। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর মাছ উৎপাদন হচ্ছে। সেই মাছও ভারতে রফতানি করা যাবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তাই আমরা চাই দ্রুতই যেন নৌবন্দরটি চালু হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির। অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ড।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন