ভারতের স্বীকৃতি বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল : ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে ভুটানের পর দ্বিতীয় বিদেশি রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল ৬ ডিসেম্বর মন্তব্য করে সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, উপমহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি ভারতের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তবে পূর্ণ বিজয় অর্জনের ১০ দিন আগেই ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশকে।

রবিবার (৬ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে ৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দিবস স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে এটি অস্বীকারের উপায় নেই। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের দেশে আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে সেনা সহায়তা দেওয়াসহ সব ধরনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তা দিয়েছিল ভারত।

তিনি আরো বলেন, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ওই দিন একটি চিঠি দিয়েছিলেন মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে। চিঠিতে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান এবং ভারতের পার্লামেন্টে ওই দিন সকালে এ বিষয়ে তার বিবৃতির কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে লেখা ইন্দিরা গান্ধীর সেই চিঠি স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিনগুলোয় মুজিবনগর সরকারকে তাৎপর্যপূর্ণ প্রেরণা জুগিয়েছিল।

বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। এদিন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ভারত থেকেও আসে স্বীকৃতি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভারতের এ স্বীকৃতি ছিল অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি বলেন, সেদিন ভারতের লোকসভায় দাঁড়িয়ে তত্কালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য শেষ না হতেই ভারতের সংসদ সদস্যদের হর্ষধ্বনি আর ‘জয় বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে ফেটে পড়ে।

সভাপতির বক্তব্যে এম এ জলিল বলেন, ভারতের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দান বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের ছিল। মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শেষ দিক পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামরিক ব্যক্তিকে আশ্রয়দানের সুযোগ দেয়। কলকাতায় একটি প্রবাসী সরকার গঠনের ব্যবস্থা করে। এ ছাড়া পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার জন্য স্বল্প পরিমাণে সামরিক সহায়তা দিতে থাকে এবং মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার জন্য ভারত কূটনৈতিক প্রচারণা অব্যাহত রাখে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এম এ জলিলের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আওয়াল মিয়া, জয়বাংলা মঞ্চের সভাপতি মুফতী মাসুম বিল্লহ নাফিয়ী, এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, আওয়ামী যুব লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক মানিক লাল ঘোষ, পিডিপি সম্পাদক মাকসুদ আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর সভাপতি মো. শহীদুননবী ডাবলু, বরিশাল বিভাগ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আ স ম মোস্তফা কামাল প্রমুখ।