ভারতে বাংলাদেশি নারীকে নির্মম যৌন নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার ৬
সম্প্রতি ভারতের কেরালায় এক বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনার মূলহোতা রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়সহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।
গ্রেফতাররা হলেন- রিফাতুল ইসলাম হৃদয়, শেখ মোহাম্মদ বাবা, সাগর ও অখিল। গ্রেফতার দুই নারীর পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বেঙ্গালুরু পুলিশ নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বেঙ্গালুরু পুলিশকে বার্তা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় বাংলাদেশি আসামিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বেঙ্গালুরু পুলিশ বাদী হয়ে দুই নারীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও লাঞ্ছনার মামলা করে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই মামলার পেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার কমল পান্তের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভুক্তভোগী তরুণী একজন বাংলাদেশি। তাকে পাচারের জন্য ভারতে আনা হয়েছিল।
এদিকে, এই ঘটনায় ভিডিও দেখে নিজের মেয়েকে শনাক্ত করে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচারের মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশীদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। এখন আমরা তদন্ত শুরু করবো এবং ভুক্তভোগীকে দেশে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। এছাড়া আসামিদের ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মামলার এজাহারে ভুক্তভোগীর বাবা জানান, তিনি মগবাজার এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন। তার মেয়ের ৬-৭ বছর আগে বিয়ে হয়। স্বামী ৩ বছর ধরে কুয়েতে থাকেন। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকে তিনি (ভুক্তভোগী) বাবা ও শ্বশুরবাড়ি উভয় জায়গায় থাকতেন। ১৫ মাস আগে বাবাকে জানান, তিনি (ভুক্তভোগী) দুবাই যাবেন। বাবা তাকে বারণ করেন। তবে ১ বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন, মগবাজারের রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় তাকে (মেয়েকে) ফুসলিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে পাচার করেন। কিছুদিন আগে ভুক্তভোগীর বাবা জানতে পারেন, মেয়েটি হৃদয়ের সঙ্গে ভারতে আছেন। তবে সম্প্রতি ভিডিওটি দেখে তিনি নিজের মেয়েকে চিনতে পারেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, ভারতে নিয়ে গিয়ে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে এক মেয়েসহ তিন-চারজন ভুক্তভোগীর হাত-পা-মুখ চেপে ধরে অমানুষিক যৌন নির্যাতন করে।
সম্প্রতি ফেসবুকে ওই তরুণীর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি শহিদুল্লাহ বলেন, ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে ৩-৪ জন যুবক শারীরিক ও বিকৃতভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ভিডিওটি ধারণ করা হয় ভারতে। ওই ভিডিওতে থাকা যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে ঢাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ফেসবুক আইডি তদন্ত করে তার আসল নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ।
এরপর তার মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানো হলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকার করেন, ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছেন। এছাড়া হাতিরঝিলের মগবাজারের স্থানীয়রাও হৃদয়কে শনাক্ত করে। স্থানীয়ভাবে তিনি টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত। তার বয়স ২৬ বছর।
তিনি বলেন, টিকটক হৃদয়ের মা ও মামা পুলিশকে জানায়, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে বাসার কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না।
ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, কৌশলে টিকটক হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে হৃদয়ের ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তখন সে জানায়, গত তিন মাস আগে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটে ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে।
হৃদয় আরও জানান, ভিডিওর ভুক্তভোগী একজন বাংলাদেশি তরুণী। তার বয়স ২০-২২ বছর হবে। ঢাকায় তার বাসা। ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভুক্তভোগীর একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ড পাঠায়।
হৃদয় জানান, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় হৃদয় ও তার কয়েকজন বন্ধু জড়িত ছিল। ঘটনাটি ঘটে ভারতের কেরালায়। ওই ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে আগে থেকেই তার পরিচয় ছিল বলে জানান তিনি।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, হৃদয়ের দেয়া তথ্যমতে তরুণীর পরিবারের সন্ধান পেয়েছি। পরিবার তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করেছে। পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির গত দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না। হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রমনা থানায় তার নামে দায়েরকৃত একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার এজাহার ও এফআইআর কপি জব্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র, যারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অসহায় ও বিদেশে গমনে ইচ্ছুক নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করতো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন