ভোটে যারা হেরেছিল, পিলখানায় বিদ্রোহের পেছনে তারা: প্রধানমন্ত্রী
যারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারেনি, তারাই পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে রক্তাক্ত বিদ্রোহের ঘটনায় ‘জড়িত’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সংসদে ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য আসে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “তার সাহস দেখেছি যখন বিডিআর এর ঘটনা ঘটে।”
নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার ৫২ দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে রক্তাক্ত বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।
সেদিন নিহত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জন আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ওই ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আমাদের চেষ্টা ছিল কোনোমতে এটাকে থামানো এবং আমাদের যারা অফিসার আছেন, তাদের রক্ষা করা, তাদের পরিবারগুলো রক্ষা করা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর পেছনে কারা ছিল? আমরা তো কেবল সরকার গঠন করেছি। এটা কোনোদিনই যুক্তিযুক্ত না যে আমরা সরকার গঠন করে এমন একটা ঘটনা ঘটাব যে দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তাহলে যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারে নাই তারাই পেছনে ছিল।
“এবং তাদের সাথে… ওই ১/১১ যারা সৃষ্টি করেছিল, যাদের ধারণা ছিল ইলেকশনে একটা হ্যাং পার্লামেন্ট হবে। কিন্তু দেখল আওয়ামী লীগ যখন মেজরিটি নিয়ে চলে এল, তখন সবকিছুকে নস্যাৎ করবার অপচেষ্টা যাদের ভেতরে ছিল, তারাই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি-জামায়াতের ‘মিথ্যাচারের’ কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ঠিক একইভাবে বিডিআরের ঘটনাটা যখন ঘটল, তখন তারা ওইভাবেই অপপ্রচার শুরু করল। তখন সাহারা আপাকে দেখেছি। সাহসে ভর করে সেখানে গিয়েছেন।”
সেই সময় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সাহারা খাতুন, যিনি বাংলাদেশে এই পদে আসা প্রথম নারী। বিডিআর সদস্যদের আত্মসমর্পণ এবং সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই পিলখানায় যেতে হয়েছিল।
তার সেই ভূমিকার প্রশংসা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাহারা আপার কথা বলতে গিয়ে বারবার এই কথা মনে হয়, যে অত্যন্ত সাহসী একজন মানুষ, সৎ এবং সংগঠনের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, দেশপ্রেমিক…।”
ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে সাহারা খাতুনের সঙ্গে পরিচয়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে তাদের কাজ ছিল বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষকে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি শেখানো।
“সেখানে সাহারা আপা, প্রয়াত আইভি রহমানসহ আমাদের আরো অনেক নেতাকর্মী, আমরা একসাথে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে, বিশেষ করে ঢাকায় যে অঞ্চলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রার্থী ছিলেন, ওই অঞ্চলেই আমরা এই কাজগুলো করতাম। তখন থেকেই আমাদের পরিচয়।”
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সে সময় যে কজন নেতা শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন, তাদের একজন সাহারা খাতুন।
সেসব দিনের কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “প্রত্যেকটা আন্দোলন, সংগ্রামে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতেন। কোনো ভয়, ভীতি কিছু তার ছিল না। তার উপর যে অত্যাচার জুলুম হয়েছে, আমরা সব সময় দেখেছি।”
এইচ এম এরশাদের শাসনামলে সাহারা খাতুনের ওপর ‘অত্যাচারের’ কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ঠিক এরপরে যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলো, তখনও তার উপর একই অত্যাচার। খালেদা জিয়ার সময় অত্যাচার তো সীমাহীন অত্যাচার। একদিকে পুলিশ বাহিনী, আরেকদিকে ছাত্রদলের ক্যাডার বাহিনী। কারণ এটা তো তিনি নিজেই বলতেন যে ছাত্রদল দিয়েই নাকি আওয়ামী লীগকে সোজা করে দেবেন।”
সে সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা লড়তে আইনজীবী হিসেবে সাহারা খাতুনের ভূমিকার কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “২০০৭ সালে আমাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় এবং একের পর এক আমার নামে যখন মামলা দেওয়া হয়… বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আমার বিরুদ্ধে ১২টা মামলা দেওয়া হয়েছিল আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পরে আরো ৫/৬টা মামলা আমার উপর দেওয়া হয়।
“তাদের প্রচেষ্টা ছিল মামলাগুলো দ্রুত করে আমাকে একটা শাস্তি দিয়ে দেবে। বলতে গেলে একদিন পরপরই আমাকে কোর্টে হাজির করতে নিয়ে যেত। এই মামলার সময় সাহারা আপা… সর্বক্ষণ তিনি সেখানে উপস্থিত থাকতেন।”
পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও ‘অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে’ পালন করেন বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
“তিনি খুব নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তার জীবনে চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। তিনি তার সবকিছু কর্মীদের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন, দেশের জন্য কাজ করেছেন। তার এই অবদান কখনো ভোলার না।”
নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এত অল্প বয়সে সে চলে যাবে বুঝতেই পারিনি। তার করোনা হয়েছিল, করোনা কিন্তু ভালো হয়ে গিয়েছিল। আসলে তার কিডনির সমস্যা ছিল। কিন্তু সে কিছু মানেনি। যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেল, তারপর চলে গেল এলাকায়। আমাদের এই রকম… আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী কিন্তু আমরা হারিয়েছি।”
ইসরাফিল আলমকে ‘অত্যন্ত মেধাবী’ রাজনীতিবিদ হিসেবে বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আমার খুব ইচ্ছা ছিল ভবিষ্যতে সে খুব ভালো একটা পার্লামেন্টারিয়ান হবে এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো অবস্থানে সে যেতে পারত। কিন্তু সেই সুযোগটা আর হলে না। আমরা ভবিষ্যতের একজন ভালো পার্লামেন্টারিয়ানকে হারালাম।”
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন