ময়মনসিংহের গৌরীপুরে দেবীরূপে মাতৃপূজা

“শুধু প্রতিমা তে নয়, প্রতিমা ‘মা’ তেই দূর্গা”- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শারদীয় দূর্গাপূজার নবমীতে প্রতিমা দেবী দূর্গাকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী জীবন্ত ‘মা’ দেবীর পায়ে পুষ্পাঞ্জলি অর্পনের মধ্য দিয়ে‘মাতৃপূজা’করেছেন অর্ধশত সন্তান।

এমন দৃশ্যের দেখা মেলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের দূর্গাবাড়ি পূজা মন্ডপে।

জানা গেছে, মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি থেকেই সোমবার সকালে এ পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এ উপজেলায় প্রথমবারের মতো জন্মদাত্রী জীবন্ত মাতৃদেবীর পূজার আয়োজন করেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত আসনের মায়েরা বসে রয়েছেন। মন্দিরের পূজা অর্চনার পরই পরম মমতায় মায়েদের পায়ে জল দিয়ে পা ধূয়ে মুছে দিচ্ছেন সন্তানরা। এরপর ধূপ জ্বালিয়ে ফুল সাজিয়ে মন্ত্র পাঠ করে মায়ের পায়ের চরণতলে অঞ্জলি প্রদানের মধ্য দিয়ে মাতৃপূজা শুরু করেন।

মায়ের মঙ্গল কামনায় মাতৃপরিক্রমা করে মায়েদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন সন্তানেরা। মায়েরা তাদের নিজ নিজ সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে প্রাণভরে আশির্বাদ করছেন। এসময় মা-সন্তানদের মধ্যে তৈরি হওয়া আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এই ভালোবাসায় মা-সন্তানদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরাও কেঁদেছেন।

পূজা দিতে আসা মিথিলা দেবনাথ বলেন, আমরা মাকে খুব ভালোবাসি। আমার মা আমার জন্য স্বর্গ। মায়ের পূজা দিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। এই ব্যতিক্রমী আয়োজনটি প্রশংসনীয়।

ঝরা দত্ত বিশ্বাস জানান, মাতৃপূজা থেকে অনেক ভালো লাগছে। প্রত্যেক ঘরে ঘরেই সন্তানরা এমনভাবে মাকে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানালে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠবে না।

মাতৃপূজা সম্পর্কে ইমন সরকার রূপম বলেন, আজকের মাতৃপূজা সন্তানদের জন্য অসাধারণ একটি বিষয়। দেবী দূর্গা যেমন দশভূজা তেমনি আমাদের মায়েরাও দশভূজা। আমাদেরকে লালন পালনের মাধ্যমে মানুষ করে তোলা, সংসার সামলাতে অনেক কষ্ট করে থাকেন। এই চর্চা অব্যাহত থাকলে মায়ের প্রতি সন্তানদের ভালোবাসা বাড়বে।

অনামিকা দেবনাথ বলেন, সন্তানরা আমাদের চরণতলে পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে যে ভালোবাসা, ভক্তি ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাতে আমরা খুব আনন্দিত।

মা শেফালী রাণী উকিল বলেন, সন্তানের এমন ভালোবাসা পেয়ে আমি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। সমস্ত সন্তানরা ভালো থাকুক এই আশির্বাদ করছি।

এ আয়োজনের মূল পরিকল্পনাকারী দূর্গাবাড়ি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সূপক রঞ্জন উকিল বলেন, আমরা প্রত্যেকেই মাকে খুব ভালোবাসি কিন্তু মায়ের প্রাপ্য সম্মান ও প্রকৃত অর্থেই মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের স্বর্গ এই উপলব্ধিটুকু সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এই ব্যতিক্রমী আয়োজন। আগামী প্রজন্ম যেন এ থেকে শিক্ষা নেয় এটাই আমাদের কাম্য।