ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার দেয়ালে ‘রক্তাক্ত জুলাই গ্রাফিতি

শিক্ষার্থীদের হাতের রঙ তুলির স্পর্শে ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার সামনের দেয়ালে ফুটে উঠেছে ‘রক্তাক্ত জুলাই গ্রাফিতি’। সোমবার সকাল থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অঙ্কন করেছে বিভিন্ন উক্তি ও চিত্রশৈলী।

‘‘আমিই বাংলাদেশ’ ‘তুমি ঘুমাও শান্তিতে, পুলিশ আছে রাস্তাতে’ ‘নতুন দিনের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়, ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা’ ‘আমার ভাই মরলো কেন ? জবাব চাই, জবাই চাই’ ‘৯ দফা, ১ দফা’ ‘Discipline, Security, Progress’ ‘৩৬ জুলাই’ ‘ ‘We Need Unity’ ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ ‘শুনো ধর্ম আর দেশ মিলাইতে যাইয়ো না, পরে ফুলের নাম দিবা কি ফাতেমা-চ‚ড়া’ ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনব’ ‘আলোকিত বাংলাদেশ’-এমন নানান প্রতিবাদী উক্তি ও আরবী ক্যালিওগ্রাফী এবং চিত্রশৈলীতে বর্ণিল হয়ে উঠেছে গৌরীপুর থানার দেয়ালটি।

সরেজমিনে গিয়ে সোমবার বিকেলে দেখা যায়, আগের দিন রোববার দেয়াল ঘষে পরিস্কার করে সেখানে প্রলেপ লাগান। আজ সোমবার সেই প্রলেপের উপর কেউ আঁকছেন বাংলাদেশের মানচিত্র, কেউবা অঙ্কন করছেন স্মৃতিসৌধ, লাল-সবুজের পতাকা।

কেউ আবার ব্যস্ত স্লোগান লেখায়, কেউ বা সড়কের দূর্ভোগ লাঘবে কাজ করছে ট্রাফিকের।

গৌরীপুর পৌর শহরের গৌরীপুর থানার জরাজীর্ণ, স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল শিক্ষার্থীদের রঙ-তুলির আঁচড়ে বর্ণিল হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ৬০-৭০ জনের দল সেখানে এই আঁকাআঁকির কাজ করছে। এমন দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতিতে চোখ জুড়ে যায় এলাকাবাসীর। আগে দেয়ালে ছিলো বিভিন্ন বিজ্ঞাপন বা রাজনৈতিক পোস্টার। আজ সেখানে অঙ্কিত হয়েছে বিভিন্ন রঙিন চিত্র ও সংস্কারমূলক উক্তি। শিক্ষার্থীদের এই চিত্রকর্মকে সাধুবাদ জানিয়েছেন গৌরীপুর থানার পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এই গ্রাফিতিতে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী তানজিনা আফরিন এ্যানি বলেন, ‘নতুনরূপে দেশটাকে আমরা রঙিন করে সাজাতে চাই। দেশের মানুষকে আমরা আমাদের বীরত্বগাঁথা সম্পর্কে জানাতে চাই। এই গ্রাফিতিগুলোই সুন্দর আগামীর বার্তা পৌঁছে দিবে দেশের মানুষের কাছে ।’

গ্রাফিতি শিল্পীরা বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। গ্রাফিতি প্রতিবাদের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমেই প্রতিবাদের ভাষা বুঝিয়ে দেয়া যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামছুজ্জামান দূর্জয় বলেন, ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেই দেশকে কুসংস্কারমুক্ত, অপরাজনীতিমুক্ত করতেই আমাদের এই গ্রাফিতির আয়োজন। আমাদেরকে গৌরীপুর থানার ওসি ও অন্যান্যরা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।

গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাসাল আল মামুন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদেরকে সাথে নিয়ে থানার ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন এবং দেয়ালের চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে তাদের এই সহযোগিতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।