মাঠে ফুটবলাররা বারবার কুলি করেন কেন?
ফিফা বিশ্বকাপ এবং ক্লাব ফুটবল ম্যাচ চলাকালে ফুটবলারদের মাঝেমধ্যেই পানীয় গিলে না ফেলে কুলি করতে দেখা যায়। সর্বশেষ রাশিয়া ফিফা বিশ্বকাপেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও হ্যারি কেনের মতো ফুটবলারদেরও কুলি করতে দেখা গেছে। এর কারণ সম্পর্কে জানাচ্ছেন সত্যজিৎ পাল–
ফুটবলাররা যে তরল বস্তু কুলি করে ফেলছেন তা আসলে পানি নয়, সেসব শর্করা দ্রবণ বা কার্বোহাইড্রেট সলিউশন। এটা কার্ব রিঞ্জিং নামে পরিচিত। অনেক গবেষণায় ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ক্রীড়া বিষয়ক কর্মক্ষমতার উন্নতি সাধনে কার্ব রিঞ্জিং সত্যিই সহায়ক হতে পারে।
এটা প্রমাণিত যে, কার্ব পান করা অথবা এটা দিয়ে কুলি করা একই রকম কার্যকরী। ক্রীড়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সৌরভ পোদ্দার বলেন, ‘কার্ব পান করা অথবা এটা দিয়ে কুলি করা একজনের কর্মক্ষমতা ২-৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের রচেস্টারে অবস্থিত মায়ো ক্লিনিকের অনুশীলন দেহতত্ত্ববিদ ড. মাইকেল জয়নার বলেন, ‘ফুটবলাররা পাকস্থলী ও অন্ত্রের বিষয় (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইস্যু) চিন্তা করে কার্ব পান না করে বরং কুলি করে ফেলে দেন।’
বিশেষজ্ঞগণ ভাবলেন, শুধু কার্ব রিঞ্জার দিয়ে কুলি করলেই কিভাবে কম সময়ের জন্য একজনের কার্যক্ষমতা প্রভাবিত হয় এবং তা উদঘাটন করতে গবেষণা শুরু করলেন। পরে দেখা গেল, আমাদের মুখের ভেতর কার্ব রিসেপ্টর থাকায় কার্ব দিয়ে কুলি করার সময় যখন কার্বসমূহ কার্ব রিসেপ্টরের সংস্পর্শে আসে; তখন কার্ব রিসেপ্টর সক্রিয় হয় এবং মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্থানকে প্রভাবিত করে। যা সম্ভবত মোটর ফাংশনকে প্রভাবান্বিত করে যার। ফলে শারীরিক গতিবিধিও প্রভাবিত হয়।
এই কার্ব রিঞ্জার মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হয়। এতে গ্লুকোজ অথবা মাল্টোডেক্সট্রিন থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই মিষ্টি স্বাদ তাদের শারীরিক পরিশ্রম সংক্রান্ত উপলব্ধি পরিবর্তন করতে পারে। তাই যখন ফুটবলাররা মিষ্টি স্বাদযুক্ত কার্ব রিঞ্জার দিয়ে কুলি করেন; তখন তারা সতেজ অনুভব করেন।
বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, স্বল্পস্থায়ী খেলাধুলায়ই শুধু কার্ব রিঞ্জার ব্যবহার করা উচিত। এটি কেবল খেলাধুলায় ব্যবহারের জন্যই প্রযোজ্য। এটি এক বা দুই ঘণ্টা ব্যাপী কার্যক্ষমতা দেখাতে সক্ষম নয়। ম্যারাথন দৌড়ের ক্ষেত্রে শরীরের অনেক বেশি শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে শুধু কার্ব রিঞ্জার দিয়ে কুলি করলে সেটি যথাযথ হবে না।
লেখক: ফার্মেসি বিভাগ, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বনানী, ঢাকা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন