‘মাথা গরম করে’ ২০ শিক্ষার্থীকে পেটালেন জাবি ছাত্রলীগ নেতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের প্রথম বর্ষের (৪৬ তম আবর্তন) প্রায় বিশ জন শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ওই হলের ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান রিজুর বিরুদ্ধে। রবিবার মধ্যরাতে হলের কমনরুমে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মারধরের এই কথা অস্বীকার করেননি রিজু। বলেন, মাথা গরম করে এই কাজ করেছেন তিনি। আর এ জন্য ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। আর তারাও ক্ষমা করে দেয়ার কথা জানিয়েছে।
এক নেতার এমন কাণ্ডে এ নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় এখনো পর্যন্ত হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে মারধরেরা এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে দেন দরবার করছেন রিজু।
রিজু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাস্টার্সের (৪২ তম আবর্তন) শিক্ষার্থী এবং আসন্ন হল কমিটির সভাপতি পদপ্রার্থী।
ভুক্তভূগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে আল বেরুনী হলের প্রথম বর্ষের (৪৬তম আবর্তন) শিক্ষার্থীরা হলের সামনে ক্যাম্পফায়ারের (আগুন জ্বেলে গোল হয়ে বসে আনন্দ করা) আয়োজন করে। ক্যাম্পফায়ার শেষে রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঘুরতে বের হয়। এ সময় তারা দলগতভাবে গান গাইতে গাইতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে।
এক পর্যায়ে তারা ছাত্রীদের হলের সামনের রাস্তা দিয়ে গান গাইতে গাইতে চলে যায়। এরপর জাহানারা ইমাম হলের এক ছাত্রী বিরক্তি প্রকাশ করে রাতে ছাত্রীদের হলের সামনে ছেলেদের গান গাওয়া নিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস দেয়। তবে তিনি কোনো হল বা ছাত্রের নাম উল্লেখ করেননি। এছাড়া সেখানে কোন ব্যক্তি বা হলের নাম উল্লেখ নেই।
এই স্টাটাসকে কেন্দ্র করে রিজু হলে ছাত্রদেরকে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। রবিবার মধ্যরাতে রিজুসহ তিন চারজন ছাত্রলীগ নেতা ৪৬তম আবর্তনের সবাইকে নিয়ে হলের কমন রুমে বসেন।
সেখানে রিজু জানতে চান, কে কে বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রীদের হলের সামনে গান গেয়েছে এবং ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করেছে?
এ সময় গান গাইতে গাইতে পুরো ক্যাম্পাস ঘোরার কথা স্বীকার করলেও ছাত্রীদের হলের সামনে গিয়ে তাদের উত্ত্যক্ত করার কথা অস্বীকার করেন ছাত্ররা। পরে রিজু সোহেল নামে এক শিক্ষার্থীকে রড আনতে বাইরে পাঠান। রড না পেলে এক পর্যায়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী কাব্য (পরিসংখ্যান-৪২ তম আবর্তন) কমন রুমের বাইরে রাখা চারটি বাঁশ নিয়ে রুমে প্রবেশ করেন এবং রিজুর হাতে দেন। পরে রিজু সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে বাঁশ দিয়ে পেটান এবং শেষে সবাইকে চড় দেন।
মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন, নাটক ও নাট্যতত্ত্বের শরীফ, ইতিহাস বিভাগের শান্ত, পাবলিক হেলথের আশিক, সুমন, রাকিব ও রনি, আইবিএর কামরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আসিফ ও সাইমন, পরিসংখ্যান বিভাগের কাউসার প্রমুখ।
বিষয়টি হলের মধ্যে জানাজানি হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে হলের জ্যেষ্ঠ ছাত্ররা বিষয়টি মিটমাটের কথা বলে শান্ত করেন।
কিন্তু সোমবার অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জামশেদ (আইআর- ৪৩ তম আবর্তন) ও জাহিদ (বাংলা-৪৩ তম আবর্তন) রিজুর কাছে মারধরের কারণ জানতে চান এবং দ্রুত বিষয়টি সমাধানের কথা বলেন। এতে রিজু ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং রিজুর সাথে থাকা প্রত্নতত্ত বিভাগের ৪১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফারুক জামশেদ ও জাহিদকে মারতে উদ্যত হলে উপস্থিত ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিষয়টি সেখানেই মিটিয়ে ফেলেন।
মারধরের কথা স্বীকার করে মাহমুদুল হাসান রিজু বলেন, ‘ওই সময় আমার মাথা গরম ছিল। তাই মারধর করেছি। পরে আমি ওদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। হলের বড় ভাইয়েরা এটি দেখতেছে। বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’
‘সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে’ এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিজু বলেন, ‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছি। এজন্য ওরা আমাকে নিজ থেকেই ক্ষমা করে দেবে বলে জেনেছি।
জানতে চাইলে হলের প্রোভোস্ট অধ্যাপক আমজাদ হোসেন জানান, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন