মাদারীপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নকল করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল

মাদারীপুর সদরের খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নকল করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার অভিযোগ উঠেছে মামলার বাদীপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। এতে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আসামীপক্ষের পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে ২০২৩ সালের ১২ জুন ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের একটি স্বাক্ষরিত চিঠি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে জমা দেয়া হয়। চিঠিতে ব্যবহৃত স্মারক নং-১৩৮০। পরে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব সায়েদুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায় ওই স্মারকে ব্যবহৃত নম্বরটি ভুয়া। ১৩৮০নং স্মারকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জোনাবালী শিকদার নামে এক মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ সনদ ২০২৩ সালের ৮ জুন প্রদান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে আদালতে দাখিলকৃত ১৩৮০নং স্মারকের চিঠি জাল ও প্রতারণা করে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আসামীপক্ষের লোকজন।

মাদারীপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত সূত্র জানায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার কোলচরী গ্রামের হান্নান বেপারীর মেয়ে হালিমা বেগম (৩২) বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ২২ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত একটি যৌতুক মামলা করেন। সেখানে আসামী করা হয় পখিরা রাজারচর গ্রামের আবুল ফজল মোল্লার ছেলে ও হালিমা বেগমের স্বামী আনোয়ার হোসেনসহ ৮ জনকে। এই মামলায় গত ১৪ই আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে আনোয়ারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আনোয়ার হোসেনের মামা দিদার হোসেন অভিযোগ বলেন, ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে আদালতে দাখিল করার কারণে নায্য বিচার না পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আমার ভাগিনা আনোয়ার মালয়েশিয়া থেকে আসার পর হয়রানী করতে মামলা দিয়েছে। এর থেকে আমরা মুক্তি চাই।

এদিকে হালিমা বেগমের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাকিলা নামে একজন পরিচয় দিয়ে কল কেটে দেন। পরে মামাতো ভাই পরিচয়ে মনজু চৌকিদার নামে একজন প্রতিবেদকের মোবাইলে ফোন করে বলেন, আমার বোন মামলা করেছে। আদালতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুটি চিঠি দিয়েছেন। দুটোই সঠিক। একটি জাল বা প্রতারনা করে পাঠানো হয়নি। আমরা আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার আশা করি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, ১৩৮০ নং স্মারক থেকে ব্যবহৃত চিঠি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আদালতে পাঠানো হয়নি। ওই স্মারকে একটি ওয়ারিশ সনদ দেয়া হয়েছে। তবে, ২০২৩ সালের ৮ই আগস্ট স্বাক্ষরিত ১৪৫২ নং স্মারকের চিঠিটি সঠিক। সেটা আদালতে পাঠানো হয়েছে। ওইদিনই আদালত কাগজটি জমা নিয়েছে। এর আগের কাগজটিও আদালত জমা নিয়েছেন। প্রথমে পাঠানো চিঠি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাঠানো হয়নি। আমরা মামলার বাদী ও তার লোকজনকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা ভুল স্বীকার করে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোসলেম আকন জানান, ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে যদি কেউ অন্যায় সুবিধা নিয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যেকোন সময় আদালত ব্যবস্থা নিতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে যে কাগজপত্র সঠিক, সেটা দিয়েই মামলার গতি আনা হয়। এই ভুয়া কাগজপত্র প্রমাণ করার দায়িত্ব আসামীপক্ষের।