মাদারীপুরে ১৭৩টি প্রাঃ বিদ্যালয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় পাঠদান

মাদারীপুরের ৫ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ১৭৩টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নতুন ভবন না থাকায় এসব পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বারবার নতুন ভবনের জন্য আবেদন জানালেও মিলছে না কোনো সুষ্ঠু সমাধান। তবে সমস্যার সমাধানে এরই মধ্যে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নামের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার চরনাচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় ৬ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বিদ্যালয়ের পুরাতন এ ভবনের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের বেহাল দশা। ভবনের কোথাও বড় ফাটল ধরে বেড়িয়ে এসেছে রড, আবার কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা। তাই ভয় ও আতঙ্কে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করে আসছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

এদিকে একই অবস্থা ১৬ নম্বর পশ্চিম পেয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির। এবিদ্যালয়ের প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ভবন সংকট থাকায় একটি কক্ষেই চলছে একাধিক শ্রেণির কার্যক্রম। এতে দাঁড়িয়ে পাঠদান করার ফলে ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়।চরনাচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার বলে, ক্লাস করার সময়ে আমাদের মাথার ওপরে ইট, পাথর ও সিমেন্টের গুঁড়া পড়ে। এতে ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে আমরা ক্লাস করছি।পরীক্ষার সময় আমাদের অনেক ভয় বেড়ে যায়।আমাদের স্কুলের জন্য একটি নতুন ভবনের আবেদন জানাই।

পশ্চিম পেয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম বলে, আমাদের স্কুলে একটি রুমে ক্লাস থ্রি ও ফোরের একসঙ্গে হয়। এতে আমাদের পড়াশোনায় অনেক সমস্যা হয়। পাশের ভবনটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের স্কুলে একটা নতুন ভবন হলে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারবো।

একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাসিফ খন্দকার বলে, আমাদের বিদ্যালয়ে পুরাতন একটি ভবন সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আরেকটি ভবনের একটি কক্ষে আমাদের দুটি শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। আমরা অনেক সময় পড়া কিছুই বুঝতে পারি না। আমাদের নতুন একটি ভবন দরকার।চরনাচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুবেল হাওলাদার বলেন, শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি আমাদের অফিস কক্ষের অবস্থাও জরাজীর্ণ।তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে শিক্ষকরা। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে আমাদের পাঠদানে আরও গতি বাড়বে।মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না মৃধা বলেন,
শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় আমাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
আমরা দ্রুত এর একটি সমাধান চাই। যাতে কোমলমতি শিশুরা পাঠদানে আরও মনযোগী হয়।

মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.নুরুল ইসলাম বলেন, মাদারীপুরের ১৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কয়েক বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে প্রশাসন ও শিক্ষা অধিদফতর।ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভবনের নামের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান না করার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে পর্যায়ক্রমে নতুন ভবন নির্মাণ করে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো হবে।