মামলার অভাবে বেকার জাপানি আইনজীবীরা
অভিনব এক সংকটে পড়েছে জাপান। সে দেশের নাগরিকরা মামলাবাজ নয়। নাগরিকদের দ্রুতবিচার নিশ্চিত করার জন্য ১৫ বছর আগে জাপান সরকার আইনজীবীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সে অনুপাতে মামলা না বাড়ায় বহু আইনজীবী এখন কর্মহীন।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানি সমাজে গতিশীলতা আনতে দেশটির নীতিনির্ধারকরা গত ১৫ বছরে পশ্চিমা আইনি ব্যবস্থার আদলে আইনজীবীর সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছেন। কিন্তু মজার বিষয় হল ততদিনে দেশটিতে মামলার সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। ফলে এ পেশায় আসা পুরাতন আইনজীবীরাই আর মক্কেল পাচ্ছেন না, নতুনরা তো একেবারে বেকার বলা যায়! একটি ল’ ফার্মের সহপ্রতিষ্ঠাতা শিনিচি সাকানো বলেন, কোনো সন্দেহ নেই, এখন মক্কেল খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে গেছে।
কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরলে জাপানে আইনজীবীদের দশাটি স্পষ্ট হবে। ২০০৬ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বেসরকারি আইনজীবীদের আয় উপার্জন অর্ধেকে নেমে গেছে। অংকের হিসেবে ১ কোটি ৭৫ লাখ ইয়েন থেকে নেমে গেছে ৯০ লাখ ইয়েনে। এ পরিস্থিতিতে গত এক দশকে আইন প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি আবেদনও কমেছে ব্যাপকভাবে। এর পেছনে আরও একটি বড় কারণ দীর্ঘ প্রশিক্ষণ এবং ধাপে ধাপে প্রচুর খরচ।
২০১৫ সালে জাপানে মোট আইনজীবীর সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৪১৫ জন। গত শতকের শেষের দিকের তুলনায় এটি দ্বিগুণ। এ সময়ের মধ্যে মামলা মোকদ্দমাও কমে গেছে ব্যাপকভাবে। জাপানে এখন প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে আইনজীবীর সংখ্যা ২৮৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা ৩৭৬৯ জন। ১০ বা তার কমসংখ্যক আইনজীবী নিয়ে চলে এমন ল’ ফার্মগুলোতে চাকরি করেন ৭৮ শতাংশ আইনজীবী। সারা দেশে মাত্র ৯টি ফার্ম আছে যারা একশ’ বা তার কিছু বেশি আইনজীবী নিয়োগ দেয়। জাপানের বৃহত্তম ল’ ফার্ম নিশিমুরা অ্যান্ড আসাহি। বিশ্বব্যাপী তাদের মোট আইনজীবীর সংখ্যা ৫২২ জন। যুক্তরাষ্ট্রে বেকার অ্যান্ড মেকেঞ্জির আইনজীবীর সংখ্যা ৪ হাজার। আইনি সহায়তায় যে উপার্জন হয় তা জাপানের মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বা ৫০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে এ রাজস্ব জিডিপির ১.২৭ শতাংশ, বা ২২ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে জাপানে ফৌজদারি মামলা কমেছে ৩৬ শতাংশ। কিন্তু দেওয়ানি মামলা বেড়েছে ২.৫ শতাংশ এবং প্রশাসনিক মামলা বেড়েছে ৯.৬ শতাংশ। ২০০৪ সালে সরকারি উদ্যোগে আইনজীবী বাড়ানোর পরিকল্পনার মধ্যে কিছু নিয়মনীতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে আইনের ছাত্র, বিচারক অথবা কৌঁসুলিদের দেশের ৪৩টি আইন প্রতিষ্ঠানের কোনো একটিতে তিন বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে হয়। এরপর লিগ্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটে ভর্তি হতে জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
গত এক দশকে এসব আইন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। অনেক আইনজীবীই পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করার কথা ভাবছেন। বিশাল অবকাঠামো এবং সম্ভাব্য বেকারত্ব নিয়ে জাপানি কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন। তাছাড়া এ পেশা ও প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কী হবে- সেটাও তাদের ভাবাচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন