মার্কিন কংগ্রেসে প্রশ্নবাণে জর্জরিত টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা সিইও শো জি চিউ

মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি হয়েছেন বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের প্রধান নির্বাহী প্রতিষ্ঠাতা সিইও শো জি চিউ।

বৃহস্পতিবার প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ধরে আইনসভার সদস্যদের একের পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত হন তিনি। টিকটক প্রধানও সমানে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবং নিজের পক্ষে প্রচুর তথ্যপ্রমাণ হাজির করেছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন সেনেটাররা সম্প্রতি নতুন একটি বিল এনেছেন। এটি পাস হলে মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে টিকটকসহ যেকোন বিদেশি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, এমনকি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা চলে যাবে। ওই আইন নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখনই টিকটক প্রধান কংগ্রেসে হাজির হলেন। যদিও তিনিই প্রথম নন, এর আগেও কংগ্রেসের সামনে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের হাজির হতে হয়েছে।

চীনা অ্যাপ হওয়ায় টিকটক প্রধানকে হেনস্তায় পিছিয়ে ছিল না ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান কেউই। প্রচুর আক্রমণাত্মক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। যদিও ঠাণ্ডা মাথায় নিজের কথা বলে গেছেন শো জি চিউ। অ্যাপটির এক মুখপাত্র শুনানি শেষে বলেন, রাজনীতিবিদরা আসলে লোক দেখানোর জন্য এমন আক্রমণ করেছেন।

শুনানির এক পর্যায়ে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলের এক নারী সদস্য ন্যানেট ব্যারাগান চিউকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তার সন্তান টিকটক ব্যবহার করে কি-না। চিউ জানান যে, তার সন্তানেরা সিঙ্গাপুরে থাকে।

আর ওই দেশে ১৩ বছরের নিচে শিশুদের উপযোগি টিকটক ভার্শন নেই। এরপর তিনি পরিষ্কার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অ্যাপের এই ভার্শনটি আছে এবং তার সন্তানেরা যদি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতো তাহলে তিনি সেটা তাদের ব্যবহার করতে দিতেন।

শুনানিতে চিউ বারবার ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’-এর কথা উল্লেখ করেন। এই প্রজেক্টটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও টিকটক মিলেই। এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের সমস্ত তথ্য যুক্তরাষ্ট্রেই জমা রাখা হয়। আর এই প্রজেক্টের দেখাশোনার দায়িত্বে আছে মার্কিন কোম্পানি ওরাকল। কিন্তু এই প্রজেক্ট টেক্সাস এখনো পুরোপুরিভাবে কাজ করছে না। তাই এখন পর্যন্ত চীনের বাইটড্যান্স প্রকৌশলীদের কাছে তথ্যে প্রবেশাধিকার আছে বলে নিশ্চিত করেন চিউ।

এই স্বীকারোক্তির বিষয়টা নিয়েই বারবার প্রশ্ন তুলতে থাকতে রাজনীতিবিদরা। তাদের যুক্তি হল যদি চীনের প্রকৌশলীরা তথ্য পেয়ে থাকে তাহলে সেখান থেকে চীনের সরকারের তথ্য না পাবার কারণ নেই। বাইটড্যান্স হল টিকটক অ্যাপটির নির্মাতা একটি চাইনিজ প্রযুক্তি কোম্পানি। চিউ সাধারণত কংগ্রসের দিকে কোন পাল্টা আক্রমণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। তবে মার্কিন কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে যেসব কেলেঙ্কারির মুখে পড়েছে তার দিকে ইঙ্গিত দেন তিনি। টিকটক নিয়ে প্রশ্নের মুখে একপর্যায়ে তিনি বলেন, সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি মার্কিন কোম্পানিগুলোরও কিন্তু ডেটা সংরক্ষণের খুব ভালো রেকর্ড নেই। শুধুমাত্র ফেসবুক আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দিকেই দেখুন। ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য একটি বৃটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক কোম্পানি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ও আরেকটি থার্ড পার্টি অ্যাপ নিয়ে নেয়ার বিষয়টি ২০১৮ সালে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল। চীনা কোম্পানিগুলোর এমন রেকর্ড নেই।

তবে মার্কিন আইনপ্রণেতারা কোনো যুক্তিই শুনতে নারাজ। শুরু থেকেই টিকটকের বিরুদ্ধে দু’দল এক হয়ে সমালোচনা করতে থাকে। শুনানি শেষে টিকটক অভিযোগ করে যে তাদের অ্যাপ তথ্য সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে ব্যাপারে খুবই কম নজর দেয়া হয়েছে। টিকটকের সিইও বলেন, কেউ বলছে না যে, টিকটকে যে ৫০ লাখ ব্যবসা আছে তাদের কী হবে! যে ১৫ কোটি মার্কিন নাগরিক টিকটক পছন্দ করেন তাদের কী হবে! এরকম একটা প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে থাকা ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ কিভাবে প্রয়োগ করা হবে!