মার্কিন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালাচ্ছে আফগান সেনারা
যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া অনেক আফগান সেনাই পালিয়ে যাচ্ছেন। কোনোরকম ছুটি ছাড়াই তারা আর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে উপস্থিত হচ্ছেন না বলে দাবি করেছে আফগানিস্তান নিয়ে শীর্ষ মার্কিন পর্যবেক্ষণ সংস্থা। দ্য স্পেশাল ইনস্পেক্টর জেনারেল ফর আফগান রিকনস্ট্রাকশন(সিগার) এর প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের হামলায় মৃত্যু ঝুঁকি ও চাকরির করুণ অবস্থার কারণেই মূলত তারা পলিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, ২০০৫ সাল থেকে প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আনা বিদেশি সেনাদের মধ্যে ৩৫২ জন পালিয়ে গেছেন। আর এর অর্ধেকই আফগানিস্তানের। রিপোর্টে বলা হয়, ১৫২ জন আফগান সেনার মধ্যে ৭০ জন অন্যদেশে চলে গেছেন। ৩৯ জন এসাইলামের মতো আশ্রয়ের অনুমতি পেয়েছেন, ২৭ জন আটক হয়েছেন কিংবা সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। আর ১৩ জন কি অবস্থায় আছে সেটা জানা যায়নি।
গত দুই বছরের তুলনায় এবারের পালানোর হার বেশি। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের অক্পেবার পর্যন্ত সংখ্যা বেড়েছে ৪৪ জন। সিগারকে দেয়া সাক্ষাতকারে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী জানিয়েছে তারা দেশে ফিরে গেলে জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
একজন নারী সেনা জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তালেবান সদস্যরা তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে শাসিয়ে এসেছে। আরেকজন দাবি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিতে আসায় তার পরিবারের উপর হামলা করেছে তালেবানরা। পরে তাকে বাসা বদল করতে হয়েছে।
পালিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে চাকরির করুণ অবস্থাকেও দায়ী করেছে সিগার। একজন বিমানের ইলেকট্রিশিয়ান জানান, আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়ার পর তিনি চাকরির আসা করেন না। কারণ তিনি দেখেছেন যে তার সহকর্মী যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে গেছে তারা চাকরি ফিরে পায়নি। ঘুষ নিয়ে তার জায়গায় অন্যদের সুযোগ দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগান সেনাদের এই পালিয়ে যাওয়ার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আফগানিস্তানে আর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা জানান, এই পালিয়ে যাওয়া সেনাদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকতে পারে কারণ তারা সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আর বয়সও লড়াইয়ের। তবে সিগার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কোনোরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি এখনো।
মিশুরির সিনেটর ক্লেইরে ম্যাকক্যাসকিল মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে এই বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আইওয়র সিনেটর চার্লস ই গ্রাসলি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি এই প্রশিক্ষণার্থীদের ধরে রাখতে না পারে তবে তাদের অন্য কোথাও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা উচিত।’
২০০২ সালের পর থেকেই আফগানিস্তানে সামরিক উন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নীতি। ১৬ বছরের লড়াইয়ে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সহায়তা ও আফগান সেনাদের সহায়তার সরাসরি সাত হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখনো তালেবানদের বিরুদ্ধে একা লড়াই করতে প্রস্তুত নয় আফগানিস্তান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন