মৃদু অভ্যুত্থানে সৌদি রাজতন্ত্রে রদবদল!
রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবে ভাতিজাকে সরিয়ে নতুন যুবরাজ হিসেবে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানের নিয়োগ বাদশাহ সালমানের বিরুদ্ধে ‘মৃদু অভ্যুত্থান’র কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। বুধবার ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘সৌদি আরবে মৃদু অভ্যুত্থান/ বারার উত্তরসূরি হলেন ছেলে।’
সৌদি আরবের রাজতন্ত্রে নতুন এ রদবদলের মাধ্যমে ইরানি নেতৃত্ব দমনের আশঙ্কা রয়েছে। গত মাসে সৌদি এ যুবরাজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ ইরানে নিয়ে যাওয়া উচিত।
মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্যের লড়াই চলছে শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত ইরান ও সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরবের মধ্যে। সিরিয়া এবং ইয়েমেন সংঘাতে পরস্পরবিরোধী পক্ষকে সমর্থন করে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী এ দুই দেশ।
দুই সপ্তাহ আগে ইরানের রাজধানী তেহরানের প্রাণকেন্দ্রে দেশটির পার্লামেন্ট ও ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির সমাধিতে হামলা চালায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএসের ওই হামলায় অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।
তেহরানের ওই হামলায় রিয়াদের দিকে আঙুল তুললেও কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে সৌদি আরব। প্রভাবশালী এ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় গত মাসে রিয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি সফরের সময়। এর পরপরই ইরানের বিরুদ্ধে মারমুখি অবস্থানে থাকা রিয়াদ থেকে সরকারি বিভিন্ন মন্তব্য আসতে থাকে। এসময় ইরান সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করে সৌদি আরব।
তবে এতে পিছিয়ে নেই ইরানও। গত মাসে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সৌদি নেতৃত্বকে ‘আহাম্মক’ বলে মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিশাল সংস্কার পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। এই পুনর্গঠনের পেছনে মূল কলকাঠি নাড়েন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি রাজতন্ত্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের প্রশাসনে বেড়ে উঠেছেন তিনি।
ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে রাজতন্ত্রের পরবর্তী উত্তরসূরি হিসেবে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স থেকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বাদশাহ সালমান। বুধবার এক রাজকীয় আদেশে বাদশাহ ওই পদে পরিবর্তন আনেন বলে সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদি রাজতন্ত্রের নতুন প্রজন্মের আদর্শ বাহক হিসেবে দেখা হয়। তিনি শুধু দেশটির অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণীর দায়িত্বেই নেই বরং প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেও সামরিক দায়িত্ব পালন করছেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কার্নেজা এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের গবেষক ফ্রেডরিক ওয়েহরি বলেন, গত বছর তার বাবা সালমান বাদশাহ’র দায়িত্ব নেয়ার পরপরই দ্রুতই নিজের প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন যুবরাজ। পাশাপাশি ক্ষমতার অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণও নিজ হাতে নেন তিনি।
পশ্চিমা এক কূটনীতিক বলেন, তিনি (মোহাম্মদ বিন সালমান) খুবই পরিচ্ছন্ন ইমেজের, খুবই বুদ্ধিমান এবং অতীতের সব যুবরাজের শীর্ষে তার অবস্থান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন