মেয়েদেরও টাক পড়তে পারে?
বংশগত টাককে মেডিক্যাল ভাষায় মেল প্যাটার্ন হেয়ার লস অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের মাথার মাঝখানে ও কপালের দুই পাশ থেকে আস্তে আস্তে চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এবং একটা পর্যায়ে চুল পড়ে মাথা খালি হয়ে যাওয়াকে বোঝায়।
এ জাতীয় টাক হওয়ার কারণ, টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন মাথার ত্বকের ওই স্থানগুলোয় ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরনে (ডিএইচটি) পরিণত হয় এবং এই ডিএইচটির প্রভাবে মোটা চুল প্রথমে পাতলা হয় এবং একপর্যায়ে হেয়ার ফলিকল (চুলের গোড়া) শুকিয়ে গিয়ে চুল সম্পূর্ণভাবে ঝরে যায়।
টেস্টোস্টেরন হরমোন ডিএইচটিতে পরিণত হতে একটি এনজাইমের প্রয়োজন ছিল। সেই এনজাইমের নাম ৫-আলফা রিডাকটেজ। সুতরাং এই ৫-আলফা রিডাকটেজের কার্যকারিতা যাদের মাথার ত্বকে বেশি তাদেরই এ জাতীয় টাক পড়ে। এ কার্যকারিতা বেশি বা কম হওয়াটা নির্ভর করে বংশগত প্রভাবের ওপর।
তাই এ জাতীয় টাককে বংশগত টাকও বলা হয়, অর্থাৎ বাবার মাথায় টাক থাকলে ছেলের মাথায় টাক পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে নতুন চিকিৎসার ব্যবস্থা এসেছে তা হচ্ছে ৫-আলফা রিডাকটেজ এনজাইমকে কার্যকর হতে না দেয়া। ফলে টেস্টোস্টেরন থেকে ডিএইচটি তৈরি হতে না পারা এবং ডিএইচটি তৈরি হতে না পারলে চুলের গোড়া শুকিয়ে যাবে না এবং টাকও পড়বে না। এ ক্ষেত্রে ফিনাস্টেরয়েড ওষুধ ভালো কাজ করে। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসা নিতে হবে। যত দিন প্রয়োজন তত দিন ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।
তবে ইতোমধ্যে যাদের টাক পড়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই ওষুধ উপকারে আসবে। প্রতিদিন এক মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেট অন্ততপক্ষে তিন মাস সেবনের পর থেকে টাক পড়া স্থানে চুল গজাতে শুরু করবে।
মহিলাদেরও ছেলেদের মতো টাক হতে পারে। মেনোপজ হওয়ার পর অর্থাৎ ৪০-৫০ বছর বয়সের মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে তখন ফিমেল হরমোনের পরিমাণ কমে যায় এবং মেল হরমোন বা টেস্টোস্টেরন বা অ্যান্ড্রোজেনের আধিক্য বেড়ে যায় ও একই নিয়মে ছেলেদের মতো টাক পড়ে। ঠিক একই কারণে সব ছেলের যেমন টাক পড়ে না, তেমনি সব বয়স্ক মহিলারও টাক পড়ে না। সে ক্ষেত্রে ওই একই চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয় যাবে এবং পাওয়া যাবে। তবে খুব সাবধান, অর্থাৎ মাসিক হচ্ছে গর্ভধারণ করার ক্ষমতা বা বয়স রয়েছে এমন মহিলারা যেন চুলপড়া রোধে এ জাতীয় ওষুধ সেবন না করেন। তাদের ক্ষেত্রে এটি সেবনে গর্ভের শিশু জন্মগত ক্ষতির ঝুঁকি থাকে এমনকি গর্ভধারণে সক্ষম বয়সের মহিলাদের খালি হাতে এ জাতীয় ওষুধ ধরাই নিষেধ, খাওয়া তো দূরের কথা। ওষুধটি শিশুদের নাগালের বাইরেও রাখতে হবে।
তবে সব ক্ষেত্রেই ওষুধটি অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশমতো ব্যবহার করতে হবে।
লেখিকা : সহযোগী অধ্যাপিকা, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ।
চেম্বার : দ্য বেস্ট কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ২০৯/২, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন