যশোরের মণিরামপুরে সেতু সংস্কারে বিকল্প পথ না রেখে ভাঙা হলো রাস্তা! বিপাকে পথচারীরা

যশোরের মণিরামপুর-রাজগঞ্জ সড়কের হরিহর নদের ওপরের জরাজীর্ণ ‘রাজগঞ্জ সেতু’ ভেঙে নতুন সেতুর জন্য দুই পাশের পাকা সড়ক গভীর করে ভেঙেছে ঠিকাদার। সড়ক ভেঙে গভীর গর্ত করা হলেও জনগণের চলাচলের জন্য পাশ দিয়ে বিকল্প পথ রাখা হয়নি। ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন সেতুর দুই পারের বাসিন্দারা।

এদিকে সেতুর স্থানে বিকল্প পথ না থাকায় আধা মিনিটের পথ পার হতে দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে পথচারীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজগঞ্জ সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো বহু বছর। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কার্যাদেশ পেয়ে প্রায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬ মিটার লম্বা সেতুটি সংস্কারের কাজ পায় আইসিএলএমএমটি জেভি নামে যশোরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ পেয়ে এক মাস আগে সেতুর দুইপাশে রাস্তা ভেঙে কাজ শুরু করেন ঠিকাদারের লোকজন। এরপর গত সপ্তাহে সেতুর পাইলের কাজ শুরু হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পুরোনো সেতুর দুইপাশে পাকা সড়ক ভেঙে ১০-১৫ ফুট গভীর করে খোঁড়া হয়েছে। পথচারী পারাপারে কোনো বিকল্প পথ রাখা হয়নি। দূর থেকে আসা বা সেতুর দুইপারের লোকজন ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পাকা সড়ক থেকে গভীরে নদীতে নেমে হেঁটে পারাপার হচ্ছে। সীমাহীন দুর্দশা নিয়ে লোকজন পারাপার হলেও তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারও।

উপজেলার খেদাপাড়া, ঝাঁপা, হরিহরনগর, মশ্মিমনগর ও চালুয়াহাটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন রাজগঞ্জ সেতু পার হয়ে মণিরামপুর বাজারে ওঠেন। এ ছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মানুষ মণিরামপুরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় এ সেতু ব্যবহার করেন। রাজগঞ্জ সেতুর পাশ দিয়ে বিকল্প পথ না থাকায় এসব অঞ্চল থেকে আসা লোকজন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

রাজগঞ্জ সেতুর এক কিলোমিটার দক্ষিণে নেহালপুর-মুক্তারপুর সড়ক। এ সড়কে মণিরামপুর মহিলা কলেজের সামনে দিয়ে এসে পৌর শহরে উঠতে পারেন পথচারীরা। কিন্তু রাস্তাটি দূরের এবং অধিকাংশ মানুষের কাছে অচেনা। মোটরসাইকেলের কিছু যাত্রী মণিরামপুর বাজারে আসতে নেহালপুর-মুক্তারপুর সড়ক ব্যবহার করলেও ইজিবাইক, ভ্যান ও ট্রেকারের যাত্রীদের চালকেরা ওই পথে না এনে নির্মাণাধীন সেতুর পশ্চিম পাড়ে নামিয়ে দেন। তখন বাধ্য হয়ে যাত্রীরা হরিহর নদের ভেতরে নেমে হেঁটে মণিরামপুর বাজারে উঠছেন।

পথচারীরা বলছেন, সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তা গভীর করে খোঁড়া। সেখানে পথচারীদের উত্তর পাশের দোকানের ভেতরের গলি দিয়ে এসে সরু পথে নদীর ভেতরে নেমে পার হতে হচ্ছে। যার মধ্যে স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রয়েছে। শুকনার সময় কষ্ট করে নদীর ভেতর দিয়ে হাঁটা গেলেও বৃষ্টি হলে তা সম্ভব হচ্ছে না। তখন কাদায় পা পিছলে পড়ে যেতে হচ্ছে পথচারীদের। এরই মধ্যে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীসহ এক নারী পা পিছলে নদীতে পড়ে আহত হয়েছেন বলে খবর মিলেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সেতু নির্মাণের স্থানে নদীর পূর্ব পারে অনেক জায়গা খালি। পশ্চিম অংশে দুইপাশে জমি না থাকায় সেতুর উত্তরের ভবনের মালিক কালীদাস ভবনের রেলিং ভেঙে হাঁটার জায়গা দিতে চাচ্ছেন। বিষয়টি ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারকে একাধিকবার জানালেও তাঁরা বিকল্প পথের কোনো ব্যবস্থা করেননি।

মণিরামপুর সরকারি প্রভাতী বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নওশীন জানায়- তাদের বাড়ি সেতুর পশ্চিম পাশে তাহেরপুর গ্রামে। প্রতিদিন গভীর গর্তে নেমে হেঁটে নদী পার হয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে তার কষ্ট হয়।

এদিকে বিকল্প পথ না থাকায় কেনাবেচা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজগঞ্জ সেতুর পশ্চিম পারের ব্যবসায়ীরা। মধুমিতা সিনেমা হলের পাশের মোবাইল সামগ্রীর দোকানি আব্দুর রহমান বলেন- আগে ভাসমান কিছু খরিদ্দার আসত। এক মাস ধরে কোনো ক্রেতা নেই। বাজার থেকে কোনো ওষুধ আনতে হলে আমাদের এখন ১ মিনিটের পথ ১ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। নদীর ওপর দিয়ে নিজেরা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নেবো ভাবছি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সেতু সংস্কারকাজ দেখভাল করছেন ইউনুস আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন- ২০০৯ সালে সেতু সংস্কারের জন্য জরিপ হয়েছে। সেখানে ১০০ মিটার দূরে দক্ষিণে পারাপারের জন্য দুটো সেতু দেখানো হয়েছে। এ জন্য রাজগঞ্জ সেতুর নকশায় হাঁটা পথের উল্লেখ নেই। ঠিকাদারতো আর নিজের টাকায় বিকল্প পথের ব্যবস্থা করবে না।

উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার রায় বলেন- সেতুর পশ্চিম অংশে দুইপাশে দুটো ভবন থাকায় বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। পশ্চিম পাশে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। কিছু দূর কাজ এগিয়ে আসলে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে বিকল্প পথ করা যাবে। সে জন্য ১ থেকে দেড় মাস সময় লাগবে।