যুগোপযোগী করেই ড্যাপ সংশোধন

♦ সরকারি-বেসরকারি আবাসন, অপরিকল্পিত এলাকা, ব্লকভিত্তিক আবাসন, একত্রীভূত প্লটের ক্যাটাগরি ফারের সুবিধা পাবে ♦ ৬ কাঠার বেশিপ্লটে দশমিক ২৫ ও ১০কাঠার বেশি দশমিক ৫০ফার প্রণোদনা পাবে ♦ চলতি মাসেই গেজেট

রাজধানীউন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) যুগোপযোগী করে সংশোধন হচ্ছে।এ ড্যাপে বেশকিছু বিষয় সংশোধন করাহয়েছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি আবাসন, অপরিকল্পিত এলাকা, ব্লকভিত্তিক আবাসন, একত্রীভূত প্লটের মালিকদের কিছুটা ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) সুবিধা বাড়ানোহয়েছে। এতে আগের চেয়েভবনের উচ্চতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে সংশোধিতড্যাপের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদনদিয়েছেন। চলতি মাসেই এটিগেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। গণপূর্তমন্ত্রণালয়সূত্র বলছেন, ড্যাপ গেজেট হওয়ার পর পেশাজীবী ওস্টেকহোল্ডাররা ফ্লোর এরিয়া রেশিওর বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনজানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত২২ মার্চ গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীশরীফ আহমেদের সভাপতিত্বে একটি পর্যালোচনা সভাঅনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তেরআলোকে ১৮ মে রাজউকচেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে ড্যাপ বাস্তবায়নসংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়।ওই সভার সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা ২০ জুলাই অনুমোদনদেন। এই সংশোধিত ড্যাপে১১টি সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করাহয়। সংশোধিত ড্যাপের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামীতিন বছরের জন্য সরকারি ওরাজউক অনুমোদিত বেসরকারি আবাসন প্রকল্পগুলোয় ভবন নির্মাণে আগ্রহীআবেদনকারীদের দশমিক ৫ ফার প্রণোদনাদেওয়া যেতে পারে। যৌক্তিকতাহিসেবে বলা হয়েছে, এসবআবাসিক এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। একইসঙ্গে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার চেয়ে নাগরিক সুবিধাবেশি থাকায় প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিতএলাকা অর্থাৎ বাড্ডা, ডেমরা, খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান, রায়েরবাজার, সাভার, কেরানীগঞ্জে ফারের সুবিধা দশমিক ৫ বাড়ানোর প্রস্তাবরাখা হয়েছে। একইভাবে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৬বিঘা পর্যন্ত আয়তনের ব্লকে ২০ শতাংশ আর১৫ বিঘার বেশি আয়তনের ব্লকে৩০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন ভূমিমালিকরা। এতে আগের তুলনায়নতুন ভবনের উচ্চতা বা প্রশস্ততা বাড়বে।ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয়রাখা হয়েছে সংশোধিত ড্যাপে। যেমন ব্লকের মোটজমির ৪০ শতাংশ উন্মুক্তস্থান (পার্ক, খেলার মাঠ, সবুজ ভূমি) হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষিতজমির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ একত্রেথাকতে হবে। এ ছাড়াব্লকের মোট আয়তনের ৮০শতাংশ জমির ওপর সর্বোচ্চভূমি আচ্ছাদন হিসাব করতে হবে। একইসঙ্গে এলাকাভিত্তিক ডুয়েলিং ইউনিট (ফ্ল্যাট সংখ্যা) প্রদানসংক্রান্ত প্রস্তাবে ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) অনুযায়ীএকক বা যৌথ প্লটভিত্তিকআবাসনের ক্ষেত্রে প্রাপ্য ডুয়েলিং ইউনিটকে ১৫ শতাংশ থেকেবাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করাযেতে পারে। এ ছাড়া ৬কাঠার বেশি আয়তনের প্লটেরক্ষেত্রে দশমিক ২৫ ফার এবং১০ কাঠার বেশি প্লটে দশমিক৫০ ফার প্রণোদনা দেওয়ারপ্রস্তাব রয়েছে। এ বিষয়ে ড্যাপেরপ্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলামবলেন, ড্যাপ গেজেট হওয়ার পরে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনসহ অংশীজনদের কাছ থেকে যেমতামত এসেছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়নও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা হয়। সেসভার সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এই সংশোধিত ড্যাপেকোনো ব্যক্তিবিশেষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি, সমগ্র ঢাকা শহরের ভিতরেএকটা সাম্য আনার চেষ্টা করাহয়েছে। তিনি বলেন, আবাসিকএলাকায় রাস্তা ছেড়ে দিলেও স্থানীয়সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝিয়ে দেওয়া হতো না। এখনসেটা কার্যকর হয়েছে। একই সঙ্গে ব্লকভিত্তিকআবাসনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। ছোটছোট প্লট থেকে যেনবড় প্লটে মানুষ যায়। আর বড়প্লটে গেলেই গ্রিন স্পেস তৈরি হবে। পরিবেশগতদিক বিবেচনায় নিয়ে ড্যাপটি সংশোধনকরা হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরওবলেন, প্রতি তিন বছর পরপর ড্যাপ রিভিউ করা হবে। আগামীরিভিউর সময় প্রেক্ষাপট ওপারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে সংশোধন হবে।এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবকাজী ওয়াসি উদ্দিন বলেন, ড্যাপ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গেসভা করা হয়েছে। সেপরিপ্রেক্ষিতে ভবন নির্মাণে ফারেরসুবিধা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আর অন্যান্য ক্ষেত্রেকোনো পরিবর্তন নেই। সংশোধিত ড্যাপপুরোটাই যুগোপযোগী। এখন এ ড্যাপআইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়ে চলে এসেছে।রাজউকের সঙ্গে সভা করে চূড়ান্তকরা হবে। আশা করিএ মাসের মধ্যেই গেজেট হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়েরকর্মকর্তারা বলছেন, ড্যাপ গেজেট হওয়ার আগে অনেক ব্যবসায়ীভবন নির্মাণে কন্ট্রাক্ট সাইনিং করেছেন। তারা জানতেন নাগেজেট হওয়ার পরে ফারের সুবিধাকমে যাবে। একই সঙ্গে গেজেটহওয়ার পরে তাদের নির্দিষ্টসময়ও দেওয়া হয়নি। এসব কারণে ড্যাপসংশোধন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে সরকারের নেওয়ামহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৯৫ সালে ঢাকামহানগরী উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) করা হয়। এরইধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে ড্যাপপ্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালের২২ জুলাই গেজেট আকারে ড্যাপ প্রকাশ করে গৃহায়ন ওগণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৩ সালেআবার ড্যাপ রিভিউ কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ২০২২ সালে (২০২২-২০৩৫) ১৩বছরের জন্য নতুন করেড্যাপ গেজেট হয়।