যেভাবে মোদীকে চরম অস্বস্তিতে ফেললেন ট্রাম্প
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে বিতর্কিত কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণা ভারতকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাশে নিয়ে সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই দিল্লি তা জোরালোভাবে অস্বীকার করে।
এদিন মঙ্গলবার পার্লামেন্টেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী কখনওই এমন কোনও অনুরোধ জানাননি এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতেই কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান হতে হবে ভারতের এই অবস্থানেও কোনও পরিবর্তন হয়নি।
তবুও ভারতের বিরোধী দলগুলো নরেন্দ্র মোদীর নিজের মুখ থেকেই এর ব্যাখ্যা শোনার জন্য জেদ ধরে আছে।
আসলে কাশ্মীর প্রশ্নে কোনও তৃতীয় পক্ষ নাক গলাতে পারবে না – শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে, এটাই দিল্লির বহু বছরের ঘোষিত অবস্থান।
বাহাত্তরের সিমলা চুক্তি বা ১৯৯৯ সালের লাহোর ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত এই অবস্থান থেকে ভারতের কোনও সরকার কখনোই সরে আসার ইঙ্গিত দেয়নি।
সেই কারণেই যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবার ওভাল অফিসে ইমরান খানকে পাশে নিয়ে মন্তব্য করেন যে দিনকয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে কাশ্মীর প্রশ্নে ‘মিডিয়েশন বা আরবিট্রেশন করার জন্য’ আর্জি জানিয়েছেন – ভারতে তার প্রতিক্রিয়া হয় বোমাবর্ষণের মতো।
এদিন সকাল থেকেই ভারতের বিরোধী দলগুলো পার্লামেন্টে এই ইস্যুতে তুমুল হইচই বাঁধিয়ে দেন।
উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুকে রাজ্যসভায় বারবার বলতে শোনা যায়, “আপনারা কি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বেশি বিশ্বাস করেন?”
“দয়া করে একটা জাতীয় ইস্যুকে রাজনৈতিক রঙ দেবেন না!”
কিছুক্ষণ পরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে বিবৃতি দিয়ে বলেন, “আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই প্রধানমন্ত্রী মোদী কখনও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এরকম কোনও অনুরোধ জানাননি।”
“আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার – পাকিস্তানের সঙ্গে সব অমীমাংসিত ইস্যু কেবলমাত্র দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতেই মেটাতে হবে, আর সেটাও হবে তারা সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ করলে তবেই।”
ঘটনা হল, সপ্তাহদুয়েক আগে জাপানে জি-২০ সামিটে ট্রাম্প ও মোদীর সত্যিই একান্তে কথাবার্তা হয়েছিল।
অতএব প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখ থেকে ব্যাখ্যা শোনার দাবিতে বিরোধী দলগুলো এরপরেও অটল থাকে।
কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ অন্য বিরোধী নেতাদের সাথে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “ভারতের অবস্থান খুব ভাল করে জানা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেন এই ধরনের একটা কথা বললেন সেটাই আমরা জানতে চাই।”
“নিশ্চয় কোনও বিশেষ কারণেই তিনি এটা বলেছেন।”
“আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করতে রাজি আছি। এটা বলছি না যে তিনি মিথ্যা কথা বলছেন – কিন্তু তার পার্লামেন্টে এসে বিবৃতি দিতে অসুবিধা কোথায়?”
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর অবশ্য বলেছেন, তার ধারণা ভালমতো না বুঝেই এবং কাশ্মীর ইস্যুতে সঠিকভাবে ‘ব্রিফড’ বা অবহিত না হয়েই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেছেন।
দিল্লিতে বহু পর্যবেক্ষকেরও ধারণা অনেকটা সেরকমই।
সিনিয়র কূটনৈতিক সংবাদদাতা দেবীরূপা মিত্র যেমন বিবিসিকে বলছিলেন, “কাশ্মীরে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় ভারতের কোনও লাভ নেই।”
“ফলে মোদীর এই ধরনের ইউ টার্ন নেওয়ারও কোনও কারণই নেই।”
“তাই গোটা ব্যাপারটাই খুব ধন্দে ফেলার মতো।”
“তবুও আমার ধারণা, বিভিন্ন দেশের অতিথি নেতাদের পাশে নিয়ে তাদের খুশি করে কথা বলাটা মার্কিন প্রেসিডেন্টের পুরনো অভ্যাস, আর এটাও সেই ‘ট্রাম্প টেমপ্লেটে’রই অংশ।”
বিতর্ক সামাল দিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এর মধ্যেই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, কাশ্মীর একটি ‘দ্বিপাক্ষিক ইস্যু’ বলেই তারা মনে করে।
অন্য দিকে ইমরান খানও মি ট্রাম্পের মন্তব্যকে লুফে নিতে দেরি করেননি।
তবে দিল্লি ও ওয়াশিংটন যত দ্রুত সম্ভব এই অস্বস্তিকর বিতর্ককে ভুলে যাওয়ারই চেষ্টা চালাচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন