যেসব দেশে বোরকা-নিকাব নিষিদ্ধ
বোরকা-নিকাব নিষিদ্ধ শুধু শ্রীলঙ্কাই প্রথম দেশ নয়। জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনসমক্ষে মুখ ঢাকা বোরকা ও নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার সমর্থকরা বলছেন, জননিরাপত্তার জন্য এটা জরুরি ছিল এবং এর পরে দেশের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে মেলামেশা বাড়বে।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নিকাব নিষিদ্ধ মুসলিম নারীদের প্রতি বৈষম্য, কারণ অনেক মুসলিম নিকাব ব্যবহারকে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা মনে করে। বিশ্বের অনেক দেশে নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আসুন জেনে নেই বিশ্বের কোন কোন দেশে নিকাপ নিষিদ্ধ-
ফ্রান্স : ইউরোপের দেশ হিসেবে প্রথম জনসম্মুখে বোরকা নিষিদ্ধ করে ফ্রান্স। ২০০৪ সালে দেশটির সব সরকারি স্কুলে ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে ফরাসি সরকার পুরো দেশজুড়ে জনসম্মুখে মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাক নিষিদ্ধ করে। এমনকি দেশটির সরকার আইন অমান্য করলে জরিমানার বিধানও চালু করে।
বেলজিয়াম : ফ্রান্সের পর ইউরোপের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বেলজিয়াম ২০১১ সালে বোরকা ও নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এমন পোশাক যা পরলে মুখ দেখা যায় না, জনসম্মুখে এ ধরনের পোশাক নিষিদ্ধ করে দেশটি। একইসঙ্গে এ ধরনের পোশাক পরলে সর্বোচ্চ সাত দিনের কারাদণ্ড বা জরিমানার বিধান রাখা হয়।
নেদারল্যান্ডস : ২০১৫ সালে জনসম্মুখে বোরকা ও নিকাব পরার ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে নেদারল্যান্ডস। ওই সময় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্কুল, হাসপাতাল ও গণপরিবহনে বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়। নেদারল্যান্ডসে এখনও বোরকা ও নিকাব পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়। তবে নিরাপত্তার কারণে ‘নির্ধারিত পরিস্থিতিতে মানুষজনকে মুখ দেখানোর’ বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইতালি : ইতালিজুড়ে বোরকা ও নিকাবের ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ২০১০ সালে দেশটির নোভারা শহরে এসব পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সেখানে কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তাকে জরিমানা দিতে হয়। এদিকে ইতালি বিভিন্ন অংশে বুরকিনি বা ইসলামি সুইমসুটের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
স্পেন : স্পেনের কাতালোনিয়ার বিভিন্ন অংশে বোরকা ও নিকাবের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। ২০১৩ সালে স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট কিছু এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা অবৈধ বলে রায় দেন। এর মাধ্যমে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব’ হয় বলে উল্লেখ করেন আদালত। তবে ২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বোরকা ও নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না।
চাদ : ২০১৫ সালের জুন মাসে দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হওয়ার পর থেকে আফ্রিকার দেশ চাদে বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের পোশাককে ‘ছদ্মবেশ’ উল্লেখ করে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কালজুবে পাহিমি দুবেট বলেন, কোনও বোরকা বিক্রি করতে দেখা গেলে তা পুড়িয়ে ফেলা হবে। এমনকি এ ধরনের ধর্মীয় পোশাক পরার কারণে কারাদণ্ডের বিধান চালু করে চাদের সরকার।
ক্যামেরুন : বোরকা ও নিকাবকে চাদ সরকার নিষিদ্ধ করার এক মাস পর আফ্রিকার আরেক দেশ ক্যামেরুন এ ধরনের পোশাক নিষিদ্ধ করে। বর্তমানে দেশটির পাঁচটি প্রদেশে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।
নাইজার : নাইজারের দিফফা অঞ্চলে মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাক নিষিদ্ধ। দেশটির এই অঞ্চলে প্রায়ই হামলা চালায় বোকা হারামের জঙ্গিরা। এদিকে দেশটিতে হিজাব বা হেডস্কার্ফও নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে নাইজারের সরকার।
কঙ্গো : আফ্রিকার দেশ কঙ্গোয় বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘যেকোনও সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে’ ২০১৫ সাল থেকে জনসম্মুখে মুখ ঢেকে রাখার পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তুরস্ক : মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্কে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারীদের সরকারি প্রতিষ্ঠানে হেডস্কার্ফ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এখন আদালত, সেনাবাহিনী ও পুলিশে কর্মরত নারীরাও হেডস্কার্ফ পরতে পারেন।
সুইজারল্যান্ড : ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডে মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে এ ধরনের পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তাকে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
ডেনমার্ক : ডেনমার্ক সরকারও বোরকা ও নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কেউ যদি এই নিয়ম অমান্য করে তবে তাকে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
জার্মানি : জার্মানিতে গাড়ি চালানোর সময় নিকাব পরা বে-আইনি। জার্মানির সংসদে পাস করা একটি আইনে বিচারক, সরকারি কর্মচারী এবং সেনাবাহিনীতে নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া পরিচয় শনাক্ত করার প্রয়োজন হলে নিকাব সরানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অস্ট্রিয়া : অস্ট্রিয়ায় স্কুল ও আদালতসহ অনেক জায়গায় নিকাব নিষিদ্ধ করে ২০১৭ সালের অক্টোবরে আইন করা হয়।
নরওয়ে : স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের দেশ নরওয়েতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিকাব নিষিদ্ধ করে আইন হয়েছে।
বুলগেরিয়া : বুলগেরিয়াতে ২০১৬ সালে এক আইনে নিকাব পরার জন্য জরিমানার পাশাপাশি সরকারি কল্যাণ ভাতা কমিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
লুক্সেমবার্গ : লুক্সেমবুর্গে হাসপাতাল, আদালত ও সরকারি অফিস-আদালতসহ কিছু কিছু জায়গায় পুরোপুরি মুখ ঢেকে রাখার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে।
আলজেরিয়া : আলজেরিয়ায় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে সরকারি কর্মচারীদের নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়।
চীন : চীনের উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশে জনসমক্ষে নিকাব এবং লম্বা দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন