যে কারণে নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ
সকাল থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৃতীয় দিনের (বুধবার, ১৪ নভেম্বর) মতো মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল কার্যালয়ের সামনে আসে। এসময় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আরও কয়েকটি মিছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়। তখন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
একপর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ফুটপাতের দিকে অবস্থান নেওয়ার জন্য রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন এবং তাদেরকে ফুটপাতের দিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং রাবার বুলেট ছুড়ে। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ করে ইট, পাটকেল, জুতা এবং অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপ করতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, দুপুর একটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হলে একপর্যায়ে পুলিশ নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে সরে গিয়ে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে স্কাউট ভবন পর্যন্ত মিছিল করেন। এসময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান এবং একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া, তারা রাস্তায় পথচারীদের কয়েকটি গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের গ্লাস ভাঙচুর করেন।
পুলিশের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের এই সংঘর্ষের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম সমহাসচিব রুহুল কবির রিজবী বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের আমি অনুরোধ করবো, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে ফুটপাতে অবস্থান গ্রহণ করুন। রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিন। এটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নির্দেশ।’
পুলিশ বিনা উস্কানিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর গুলি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছিলেন। দুপুরে পৃলিশ বিনা উস্কানিতে হামলা চালায়। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমি পুলিশকে অনুরোধ করবো, শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় এবং গণতন্ত্র ধ্বংস হয়,এমন কাজ করবেন না। কারও নির্দেশে কাজ করবেন না। আপনারা দেশের সন্তান। কারও স্বার্থ রক্ষার্থে অন্যায় নির্দেশ পালন করবেন না।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা গত দুদিন শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছিলাম। আজকে বিনা উস্কানিতে হামলা করা হয়েছে। হামলায় আমাদের আব্বাস, নাহিদ, মুকুল, মোস্তফা, স্বপন, হারুনসহ ২০ জনের মতো নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন।’ কার্যালয়ের সামনে বিএনপির একটি চিকিৎসক দল আহতদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিনা উস্কানিতে পুলিশের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। হঠাৎ বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়। প্রাথমিকভাবে আমাদের ৮-১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। আহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।’
পুলিশের অবস্থান কতক্ষণ থাকবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন