যে মোবাইলেই কল হোক, সর্বনিম্ন রেট ৪৫ পয়সা

মোবাইল ফোনে নিজের অপারেটর এবং অন্য অপারেটরে আলাদা কলরেটের নিয়ম বিলুপ্ত করে সব মোবাইলের জন্য প্রতি মিনিট সর্বোচ্চ ২ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা ট্যারিফ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
সেই সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে অন্যান্য অপারেটরদের ইন্টারকানেকশন চার্জ পুনর্নির্ধারণ করে সোমবার চিঠি পাঠানো হয়েছে চার অপারেটরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে।
দেশের সব অপারেটরকে ১৪ অগাস্ট প্রথম প্রহর, অর্থাৎ সোমবার রাত ১২টা ১টা মিনিট থেকেই নতুন ট্যারিফ প্ল্যান কার্যকর করতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
এতদিন একই অপারেটরে (অন-নেট) ফোন কলের জন্য গ্রাহকদের প্রতি মিনিটে সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা এবং অন্য অপারেটরে (অফ-নেট) ৬০ পয়সা হারে ট্যারিফ প্রযোজ্য হত। এই নিয়ম চলছিল গত সাত বছর ধরে।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে অন-নেট, অফ-নেটের ট্যারিফ সীমার ব্যবধান আর থাকল না। গ্রাহক যে অপারেটরেই কথা বলুক না কেন, প্রতি মিনিটে তার খরচ হবে প্যাকেজ, বান্ডেল আর সময় ভেদে ৪৫ পয়সা থেকে ২ টাকার মধ্যে। সেই সঙ্গে আগের মতই ভ্যাট ও অন্যান্য শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া অফ-নেট কলে ইন্টারকানেকশন চার্জ ১৪ পয়সা (আইসিএক্স শূন্য দশমিক শূন্য ৪ পয়সা এবং টার্মেনেটিং অপারেটর ১০ পয়সা প্রতি মিনিট) নির্ধারণ করা হয়েছে। এই চার্জ সকল মোবাইল অপারেটর, আইপিটিএসপি, পিএসটিএন এবং আইসিএক্স অপারেটরের জন্য প্রযোজ্য হবে, গ্রাহকের ওপর নয়।
টেলিকম খাতের একজন বিশ্লেষক বলেছেন, গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা অপারেটররা অন-নেটে নানা অফার ও বান্ডেল দিয়ে অন্যান্য অপারেটরদের তুলনায় বেশি সুবিধা পেত। অভিন্ন ট্যারিফ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ায় বাজারে ভারসাম্য আসবে।
বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের মানুষের হাতে ১৫ কোটির বেশি মোবাইল সিম ছিল।
এর মধ্যে সাত কোটি গ্রাহকই গ্রামীণ ফোনের সেবা নেন। রবির গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৪৭ লাখ, বাংলা লিংকের ৩ কোটি ৩২ লাখ। আর রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা সবচেয়ে কম, মাত্র ৩৭ লাখ।
রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম নতুন ট্যারিফ সীমাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এর ফলে গ্রাহকের অন-নেট, অফ-নেট প্যাকেজের ঝামেলা থাকল না। গ্রাহকের কাছে বিষয়গুলো আরও সহজ হল।”
তিনি বলেন, নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল (এমএনপি) শুরু হলে অন-নেট, অফ-নেটের আলাদা ট্যারিফ সীমায় সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ছিল, এখন তা কেটে গেল।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, “সরকারের এই উদ্যোগকে বাংলালিংক আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এটি গ্রাহকদের নেটওয়ার্ক বেছে নেওয়ার এবং কল করার স্বাধীনতা বাড়াবে; তাদের জীবনযাত্রা আরও সহজ করতে ভূমিকা রাখবে, যা আগে ছিল না।“
প্রশ্নে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামাল এক ইমেইলে বলেন, “আমরা বিটিআরসির চিঠি পেয়েছি এবং সে অনুযায়ী নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি।”
একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের একজন কর্মকর্তা বলেন, একমাত্র বাংলাদেশই অফ-নেট ও অন-নেট ট্যরিফ চালিয়ে আসছিল। শ্রীলঙ্কাও ২০১৬ সালে ভিন্ন ট্যারিফ সীমা তুলে দিয়ে অভিন্ন হার চালু করে।
সর্বশেষ ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) পরামর্শকের সুপারিশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কলরেট নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
প্রায় সাত বছর পর বিটিআরসি তা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়ে বলেছিল, নতুন কাঠামো চালু হলে পিছিয়ে থাকা অপারেটরগুলো সুবিধা পাবে এবং বাজার ভারসাম্য তৈরি হবে। তাছাড়া সামগ্রিকভাবে এ খাতে আয় বাড়বে।
ওই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে বিটিআরসি অন-নেটে সর্বনিম্ন কলরেট বাড়িয়ে ৩৫ পয়সা, অফনেটে সর্বনিম্ন কলরেট কমিয়ে ৪৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ সীমা দুই টাকা থেকে কমিয়ে দেড় টাকা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে।
কিন্তু সরকার এ প্রস্তাবে কোন জায়গায় খরচ বাড়বে আবার কোন জায়গায় খরচ কমবে, সার্বিক প্রভাব কী হবে- তা বিশ্লেষণের নির্দেশ দিলে ওই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন আটকে যায়।
সোমবার অপারেটরদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, অপারেটররা অন-নেট এবং অফ-নেট গ্রাহকের জন্য পৃথক ট্যারিফ অফার করতে পারবে না। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট প্যাকেজ বা অফার বা ব্যান্ডেলে অন-নেট এবং অফ-নেটের জন্য একই ট্যারিফ প্রযোজ্য হবে।
সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে গ্রাহকের রিচার্জ করা অর্থ বা টক টাইম অথবা এয়ার টাইম এবং চালু সকল রেগুলার প্যাকেজ বা অফার অথবা বান্ডেল নতুন ট্যারিফ প্ল্যানের আওতায় সমন্বয় করতে হবে। বিষয়টি গ্রাহকদের জানিয়েও দিতে হবে।
গ্রাহকদের বিভ্রান্তি এড়াতে বাজার থেকে পুরনো ট্যারিফ প্ল্যানের সব ধরনের প্রচারও সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন



















