রংপুরে মাদ্রাসা পরিচালকের স্ত্রীকে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ দাদন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে

রংপুরের মিঠাপুকুরে নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত একটি আবাসিক বালিকা মাদ্রাসায় অতিথি হিসেবে ঘুরতে আসা বন্ধুকে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের অপবাদ রটিয়ে প্রচন্ড মারধর এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দুই যুবক সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এমনকি সব ছিনিয়ে নেওয়ার পর মাদ্রাসার পরিচালকের স্ত্রী এবং শ্বাশুড়িকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার কথা বলে শারীরিক সম্পর্ক করার কু-প্রস্তাব দেন অভিযুক্তরা।

শুক্রবার (২-ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত আনুমানিক ২ ঘটিকার সময় মিঠাপুকুর উপজেলার ০২ নং রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদিপুকুর পাচ্ছাপাড়া দারুস সুন্নাহ আদর্শ বালিকা মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী ওই মাদ্রাসার পরিচালক- হাফেজ সিরাতুল ইসলাম মিঠাপুকুর থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী এবং তার স্বামীর অভিযোগ – শিশুদের কুরআন এবং ইসলাম শিক্ষার ব্যবস্থা করতে তাদের নিজ বাড়িতে কয়েক বছর পূর্বে দারুস সুন্নাহ আদর্শ বালিকা মাদ্রাসা নামে একটি আবাসিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন তারা। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাদ্রাসাটি ভালোই চলছে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় মাদ্রাসাটি আরবি শিক্ষায় চারপাশ মুখর করে রেখেছে । কিন্তু মাদ্রাসার পাশ্ববর্তী শেখ সাদী নামে এক যুবকের বাড়ি ও দোকানঘর থাকায় প্রায়ই শেখ সাদী মাদ্রাসায় পড়তে আসা আবাসিক এবং অনাবাসিক ছাত্রীদের কু-নজর এবং মাদ্রাসার পরিচালকের স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এমনকি পরিচালকের বিধবা শ্বাশুড়িকে কুপ্রস্তাব দিতেন।

শুক্রবার (২- ফেব্রুয়ারি) সন্ধা আনুমানিক ছয় ঘটিকার সময় সিরাতুলের বন্ধু শফিউল ইসলাম আকস্মিক পীরগাছা থেকে মিঠাপুকুর এসে সিরাতুলকে ফোন দিয়ে জানায়, সে মিঠাপুকুরে তাঁর মাদ্রাসা দেখতে এসেছে। সিরাতুল বিশ্ব ইজতেমায় থাকায় সে শফিউলকে অনুরোধ করে, সে যেনো ফিরে না গিয়ে মাদ্রাসার গেস্ট রুমে থাকে এবং আসন্ন রমজান উপলক্ষে মাদ্রাসার উন্নয়নে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সিরাতুলের অনুরোধে শফিউল উক্ত মাদ্রাসায় গিয়ে অবস্থান নিলে অভিযুক্ত শেখ সাদী তাঁকে দেখতে পেয়ে সুযোগ বুঝে রাতে মাদ্রাসার ভিতরে ঢুকে মাদ্রাসার পরিচালকের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের অপবাদ রটিয়ে মরধর শুরু করেন। তার চিৎকার চেঁচামেচিতে ওই নারী সেখানে উপস্থিত হলে তাঁকেও ভয়ভীতি দেখান।

এক পর্যায়ে ওই নারীকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের জন্য কুপ্রস্তাব দেন। এতে ওই নারী সম্মতি না দিলে শেখ সাদী, ফোন দিয়ে তার আরো কয়েকজন সঙ্গীকে ডাক দেন। শেখ সাদী এবং তার বন্ধু মাসুদ সহ আরো কয়েকজন উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগীদের কাছে একলক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে লোকলজ্জার ভয়ে এবং চাপে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ২০,০০০ টাকা দিলে রাতভর নানান নাটকীয়তা শেষে তাদের মুঠোফোন কেঁড়ে নিয়ে ওই নারী এবং ভুক্তভোগীকে ছেড়ে দেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান , শেখ সাদী ওই এলাকার একজন টাউট এবং চিহ্নিত দাদন ব্যবসায়ি। আছিয়া বেওয়া নামে এক নারী বলেন, প্রায়ই সে গ্রামের অসহায় নারীদের কুপ্রস্তাব দেয়। শেখ সাদী তার পিছনে লেগেই আছে। তাঁকে দীর্ঘদিন থেকে কুপ্রস্তাব দিয়েই আসছে। এর পূর্বেও তার এমন অভিযোগে স্থানীয় ভাবে সার্লিশ হয়েছে। শাহজাদী নামে এক নারী অভিযোগ করেন তাঁর মেয়ে হাওয়া বানুকে এর পূর্বে সে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিলো।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেখ সাদী জানান, ঘটনা যখন ঘটেছিলো তখন আমার হাতপা ধরেছে। ওদের লোকজন আমাকে কিছু টাকা ও মোবাইল দিয়েছে। এখন নানাবিধ অপপ্রচার চালাচ্ছে। ঘটনা সত্য কিনা সেটা সময় মতো দেখাবো। সব প্রমাণ আমার কাছে আছে।

মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এলাকাবাসী সহ সচেতন মহলের দাবি- সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় শেখ সাদীর মতো লোকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা একান্ত জরুরি।