রক্ত-ঘামে সভ্যতা সাজে, তবুও অধরা শ্রমঘণ্টা
শ্রমেই সাজছে পৃথিবী। মানুষ ভিনগ্রহে বসবাসের স্বপ্নে বিভোর। সভ্যতার রূপায়ন ঘটছে প্রতি ক্ষণে। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মানব ইতিহাস। আর এই সৃষ্টি ইতিহাস গড়ার কারিগরই হচ্ছেন শ্রমিকেরা।
শ্রমিকের ঘাম ঝরে। শ্রমিকের রক্ত ঝরে। যে অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রায় দেড়’শ বছর আগে শ্রমিকেরা বুকেরা তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, তা আজও অধরা।
গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশন সভাপতি মোশরেফা মিশু। বলেন, ‘যে অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজ থেকে ১৩২ বছর আগে শ্রমিকরা রক্ত দিয়েছিলেন, সেই আট ঘণ্টা শ্রম অধিকার আজও প্রতিষ্ঠা পায়নি।’
হাজার বছরের বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। শ্রম ঘণ্টা কমিয়ে আনার দাবিতে এদিন শ্রমিকরা যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সে ডাকে শিকাগো শহরের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। এক লাখ ৮৫ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরও অসংখ্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝাণ্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভ চলাকালে এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান।
আজও শ্রমিকের অধিকার নিয়ে আন্দোলন হয়, আলোচনা হয়, দিবস পালন হয়। কিন্তু শ্রমিকের সে অধিকার যেন ‘দিবস’ পালনের মধ্যেই আটকে রয় শ্রমিকের শ্রম ঘণ্টা নিয়ে আজও কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা হয় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমের সময়-সূচি নিয়ে এখনও কোনো নিয়ম মানা হয় না। আজও শ্রমিক নির্যাতন হয়। মালিক-রাষ্ট্র মিলে আজও শ্রমিকের অধিকার হরণ করে।
আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্ট ফ্যক্টরিতে কাজ করেন সুরত জামাল। ১৫ বছর আগে গাজীপুরে এসে ১১শ টাকায় চাকরি নিয়েছিলেন। দিনে ১২ ঘণ্টার শ্রমে কাজের শুরু। আজও ১২ ঘণ্টা শ্রম দেন ফ্যাক্টরিতে।
বলেন, ‘১২ ঘণ্টা কাজ না করলে চাকরি দিত না। আজও ১২ ঘণ্টা কাজ করি। ৮ ঘণ্টার বাইরে ৪ ঘণ্টা ওভারটাইমের কথা বলা হয়। কিন্তু বেতন কত, আর ওভারটাইমের মূল্য কত, তা আজও জানতে পারলাম না। ওভার টাইম না করলে চাকরিই দেবে না।’
বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে গিয়ে শ্রমিকের অধিকার প্রসঙ্গে জানতে পেরেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মালিকরা আমাদের অধিকার দিলে তো বছর বছর নতুন ফ্যাক্টরি দিতে পারবেন না।’
শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু বলেন, শ্রমিকের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতেই ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেয় না। মালিক, রাষ্ট্র মিলেই শ্রমিককে শোষণ করছে। শুক্রবারেও গার্মেন্ট শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। ওভারটাইমের কথা বলে ১২ ঘণ্টা কাজ না করলে চাকরি দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে দু’বছর আগে আশুলিয়ায় আন্দোলনের জেরে ১৬’শ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। ১৫’শ শ্রমিককের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়েছে। ৩০ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধিকার আন্দোলন করতে গিয়ে যদি রাষ্ট্রদোহ মামলা হয়, তাহলে দেশের শ্রমিকদের সার্বিক চিত্র এমনিতেই ভেসে ওঠে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হলেও রাষ্ট্রের অনুমোদন লাগে। মে দিবসে আশুলিয়ায় শ্রমিক সমাবেশ ছিল। আমার সেখানে বক্তব্য দেয়ার কথা। সরকার সেই সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় শ্রমিকের সঙ্গে রাষ্ট্র এবং মালিকের মধ্যকার দূরত্ব।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন