রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতি শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান
‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ে তোলা। আর সোনার মানুষ গড়ে তোলার অপরিহার্য অনুষঙ্গ ছিল শিক্ষা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শেও ছিল শিক্ষা-দর্শন। ছয় দফার মধ্যেও শিক্ষার উন্নয়নের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ ছিল। বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন শিক্ষার বিনিয়োগ শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। তাই স্বাধীনতার পরপরই তিনি নানামুখি কর্মকান্ডের মধ্যেও শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই আমরা পেয়েছিলাম কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন। কিন্তু দুভার্গ্যরে বিষয়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সবকিছুর বিপরীতমুখি যাত্রা শুরু হয়।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের প্রাজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার দূরদৃষ্টিতে ২০১০ সালের শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। সেই শিক্ষানীতি পুনঃপর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করার কাজ শুরু হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে অন্যদের সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও পথিকৃতের ভূমিকা পালন করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিত করা ও দেশ-জাতি-সমাজের সকল ক্ষেত্রে তার দৃশ্যমানতা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহŸান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বে প্রায় দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ভাষা জ্ঞান, প্রকাশ জ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান যাচাই করে মূল্যায়ন করা হয়। ফলে একটিমাত্র পরীক্ষা দিয়ে সকল শিক্ষার্থী তাদের যোগ্যতা অনুসারে ভর্তির সুযোগ পায়।
সময়ের চাহিদা পূরণে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তাদের পাঠ্যক্রম সেভাবে বিন্যাস করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। বর্তমান সরকার শিক্ষাধারায় ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ এ বিশেষভাবে আগ্রহী সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতি শিক্ষামন্ত্রী আহŸান জানান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে ৯৬ জনকে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, অগ্রণী ব্যাংক; ৫ জনকে ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ স্বর্ণপদক ও ২ জনকে ডা. এ কে খান স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী কৃতী শিক্ষার্থীদের এসব পদক প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মুরশেদুল কবীর, এবং রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য সভাপতির বক্তব্যে বলেন, জ্ঞান নীতি সত্য হলো আত্মার রক্ষাকবজ। শিক্ষার উদ্দেশ্যই হলো অন্তরকে আলোকিত করা। অন্তরের মধ্যে যদি কোনো অন্ধকার থাকে সেটাকে দূরীভূত করে শিক্ষা। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে চেষ্টাটাই সবসময়ই করেছিলেন। ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তার এক দশক আগেই শিল্প বিপ্লব হয়ে গিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু সে বিষয়টাকে মাথায় রেখে তিনি কুদরত-ই-খুদার মত মানুষকে শিক্ষা কমিশনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার। সে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, আমাদের আগামীর হাতছানি বিচারের সবকিছুই আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে। যারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে অবশ্যই বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, পিতা-কন্যার যে ধ্রুপদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সে উন্নয়নে আপনারা সবসময়ই পাশে থাকবেন। কারণ এরই মধ্যে বাঙালি জাতির শান্তি ও মুক্তি।
প্রসঙ্গক্রমে উপাচার্য স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তারা যেন তাদের অর্জিত জ্ঞান ও মেধার স্বর্ণচ্ছটায় জাতিকে আলোকিত করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনাসহ নাট্যকলা এবং সংগীত বিভাগের পক্ষ থেকে সূচনা সংগীত পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস আরা ও নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক সুমনা সরকার।
প্রসঙ্গত অনার্স, মাস্টার্স বা এমবিবিএস পরীক্ষায় অনুষদে প্রথম শ্রেণিসহ প্রথম স্থান অধিকারীকে অগ্রণী ব্যাংক স্বর্ণপদক, দর্শন বিষয়ে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারীকে ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ স্বর্ণপদক এবং এমবিবিএস (শেষ বৃত্তিমূলক, নিয়মিত) পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬০% নম্বরসহ চিকিৎসা অনুষদে প্রথম স্থান অধিকারীকে ডা. এ কে খান স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন