রাজারবাগের পীরকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার নির্দেশ
রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমানসহ তার সহযোগীরা কুরআন ও হাদিসের খণ্ডিত ব্যাখ্যা দিয়ে দেশের ধর্মভীরু মানুষকে ভুলপথে পরিচালনা করছে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা ও তথাকথিত জিহাদকে উস্কে দিচ্ছে। তাদের কার্যক্রম জঙ্গিদের কার্যক্রমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রাজারবাগ পীর সিন্ডিকেটের দায়ের করা ৪৯ মামলার বাদীদের খুঁজতে ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের এবং অপর আটজনের দায়ের করা পৃথক রিটে দেওয়া আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিটিটিসি এমন প্রতিবেদন জমা দেয় আদালতে।
এদিকে মামলার তদন্তের স্বার্থে সিআইডি, কাউন্টার টেরোরিজম ও দুদক চাইলে রাজারবাগ দরবার শরীফের পীরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
একইসঙ্গে রাজারবাগ দরবার শরীফ ও পীরের কর্মকাণ্ডের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে কাউন্টার টেরোরিজমকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রিটের ধারাবাহিকতায় গত ২ ডিসেম্বর পীর দিল্লুর রহমানসহ চারজনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে সম্পূরক রিট আবেদন দায়ের করা হয়। অন্য তিনজন হলেন- শাকিরুল কবির, ফারুকুর রহমান ও মফিজুল ইসলাম।ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির সম্পূরক এ রিট আবেদন দায়ের করেন।
এর আগে রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ‘অস্তিত্বহীন’ বাদীর করা ৪৯ মামলার প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ১২ সেপ্টেম্বর সিআইডির দাখিল করা প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি ভুয়া মামলার নেপথ্যে রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমানের নাম উঠে আসে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হাইকোর্টে ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদন জমা দেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রতন কৃঞ্চ নাথ। প্রতিবেদন দাখিলের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির নেপথ্যে পীরের কারসাজির তথ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পরে আরও আট ভুক্তভোগী আরেকটি রিট দায়ের করেন।
এদিকে রোববার পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ সিটিআই-৩ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে মতামত অংশে তিনি উল্লেখ করেন, রাজারবাগ দরবারের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘দৈনিক আল ইহসান’ ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ এবং বিভিন্ন বই প্রকাশিত হয়। এসব প্রকাশনা এবং বিভিন্ন জেলায় তাদের অনুসারীদের কার্যক্রমের কারণে দায়েরকৃত মামলা ও তদন্তের ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়।
এতে দেখা যায়, তারা ইসলাম ধর্মের নামে এবং অনেক ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের খণ্ডিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে এ দেশের ধর্মভীরু মানুষকে ভুলপথে পরিচালিত করে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা ও তথাকথিত জিহাদকে উসকে দিচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের মতবাদ প্রচার করছে ও কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজারবাগ দরবারের পীর ও তার সহযোগী অনুসারীদের কার্যক্রম জঙ্গিদের কাযক্রমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন