রাত্রে ঘুম আসে না? জেনে নিন ৫ মিনিটে ঘুমিয়ে পড়ার উপায়!
রাত্রে ঘুম আসে না ? জেনে নিন ৫ মিনিটে ঘুমিয়ে পড়ার ১০ টি উপায় : ঘুম মানুষের জীবনের অতি প্রয়োজনীয় ঘটনা। ঘুম মানুষের কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে কারন পরিপূর্ণ ঘুম মানুষকে সতেজ করে তুলে। সুতরাং মানুষের জীবনে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসিম। প্রতিদিনই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও কিছুতেই সময়মত ঘুমাতে যাওয়া হয়না। কোনো না কোনো কারণে দেরী হয়েই যায়। আবার সময়মতো ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেলেও এপাশ ওপাশ করে ঘুম আসে না। তাই ঘুম নিয়ে মানুষের সমস্যার শেষ নেই। সেইজন্য বেশীরভাগ মানুষ সময়মত ঘুমাতে পারেন না। বিছানায় শোবার পরও ঘুম আসে না। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করা এবং ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রাত পার করার যন্ত্রণা যাদের ঘুম আসেনা একমাত্র তারাই বলতে পারবেন। ঘুম না আসার সবথেকে বড় কারণ হচ্ছে মন অস্থির থাকা। আর মন অস্থির হয়ে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ। মানসিক চাপ হওয়ার কারণে ঘুম আসতে চায় না। যার ফলে দেখা যায় বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।
তাই সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুমের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। ভালো ঘুম যেমন মনকে প্রফুল্ল রাখে, তেমনি শরীরের ইমিউন সিস্টেমও উন্নত করে। শুধু তাই নয়, পর্যাপ্ত ঘুম ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এরকম আরও কত কি। কিন্তু আপনার যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয় তাহলে সকাল থেকেই মেজাজটা খিটখিটে থাকে। পুরো দিনটাই মাটি হয়ে যায়। এরপর আবার আর একটি রাত আসে অনিদ্রা নিয়ে। ফলে জীবন থেকে সুখটাই চিরতরে হারিয়ে যায়। তবে অনিদ্রা দূর করে ভালোভাবে ঘুম থেকে উঠে দিন শুরু করারও উপায় আছে। যাই হোক, আমাদের সকলের পর্যাপ্ত পরিমাণ ও সময়মত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়তে চান আপনি ? “রাত্রে ঘুম আসে না ? জেনে নিন ৫ মিনিটে ঘুমিয়ে পড়ার ১০ টি উপায়” তাহলে জেনে নিন কিছু টিপস।
ডায়েট
পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খাবার ফলে শরীরের পালস এর গতি বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ঘুমের সমস্যা দূর হয়। খাবারের ফলে শরীরের ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য অপরিহার্য খনিজ এর চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়া সঠিক ডায়েটের কারনে শরীরের ট্রিপটোফেন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা সঠিক সময়ে ঘুম আসার সাথে সাথে সঠিক সময়ে জাগ্রত হবার জন্য সাহায্য করে।রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘন্টা আগে খাবার খেয়ে নিন। এরপর ৫-১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন। এটি খাবার হজমে দারুণ সহায়তা করে। সঙ্গে ক্লান্তিও আসে। ফলে বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুম আসে।
গরম দুধ
আগেকার দিনে ঘুমোতে যাবার আগে সবাই গরম দুধ খেতো। ঘুমাতে যাবার আগে গরম দুধ খেলে শরীরে ট্রিপটোফেন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ছুটির দিনে এর ব্যাতিক্রম হলেও সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতেও তা অনুসরণ করুন। কাজের চাপে হয়তো এটা করাটা বেশ কঠিন হবে কিন্তু চেষ্টা করুন সকালে উঠতে। কাজের জন্য দেরিতে না ঘুমিয়ে সকালে তাড়াতাড়ি উঠে কাজ শুরু করাটাই সবচেয়ে ভালো। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাবার অভ্যাস করলে সেই সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই ঝিম ভাব চলে আসবে। তখন আপনার ঘুমাতে যেতে হবে। একই সময়ে ঘুমানোর কারনে মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও মিলাটোনিন ঠিকমত কাজ করতে পারে। যার ফলে আপনার সার্কাডিয়ান তালের সামঞ্জস্য বজায় থাকে।
ঘুমোতে যাবার আগে বই পড়ুন
ঘুমানোর সব থেকে সহজ উপায় হল বিছানায় লাইট অফ শুয়ে পড়ুন। তারপর বিছানার পাশে হালকা আলো জ্বালিয়ে বই পড়ুন। তবে আপনাকে মোবাইল, ট্যাব, টিভি ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। তাই এবার থেকে আপনার বিছানার পাশে একটি বই রাখুন।
গাণিতিক পদ্ধতি
ঘড়ি দেখে ৪ মিনিট নিশ্বাস নিন, ৭ মিনিট শ্বাস ধরে রাখুন এবং ৮ মিনিট ধরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। ৩ বার এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন। দেখবেন খুব সহজেই ঘুম চলে আসবে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
আপনি যখন শুয়ে ঘুম না আসা নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন এবং অপেক্ষা করেন তখন আরও বেশী মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় যা আরও বেশী ব্যাঘাত ঘটে। যখন আমরা দুশ্চিন্তা করি এবং চিন্তা করতে থাকি তখন আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব ঘটে। এতে করেই অনেক বেশী ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে থাকে। যখন এই ৪-৭-৮ নিঃশ্বাসের ব্যায়ামটি করা হয় তখন অক্সিজেন আমাদের মস্তিষ্কে ভালো করে পৌছায়। যখন আপনি ৪ সেকেন্ড নিশ্বাস নেন তখন তা আপনাকে শান্ত করে এবং যখন ৭ সেকেন্ড দম ধরে থাকেন তখন মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌছায়। এরপর আপনি যখন দম ছাড়েন তখন আপনার দেহ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূর হয়ে যায়। এতে আপনার হার্টবিটও কমে আসবে এবং আপনার দুশ্চিন্তা কমে আসবে। আপনার দেহ ও মন রিলাক্স হবে। চেষ্টা করে দেখুন ঘুম আসবেই।
মেডিটেশন
চোখ বন্ধ করে উপরে তাকিয়ে থাকুন। তারপর একটা বিশাল সাদা রং এর পর্দা কল্পনা করুন। আর তার মধ্যে হালকা নিল রঙের একটা সংখ্যা কল্পনা করুন, তাহলো ১৯। এরপর তা আসতে আসতে মিলিয়ে যাচ্ছে এবং আবার আসতে আসতে আরেকটা সংখ্যা আসছে, তাহলো ১৮। এইভাবে উল্টো কাউন্ট করতে থাকুন। তবে তা খুব ধীরে ধীরে। এইভাবে কিছুক্ষণ করার পর দেখবেন আপনার ঘুম চলে আসছে।
ইতিবাচক ভাবনা
ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথা থেকে নেতিবাচক সকল চিন্তা দূর করে দিন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার সকল দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে ইতিবাচক ও সুখকর ঘটনা মনে করার চেষ্টা করুন।
দিনের সেরা ৩ টি ঘটনা আবার ভাবুন
দিনের শেষে ঘুমানোর আগে সারা দিনের ৩ টি ভালো ঘটনার কথা মনে করুন। ভালো মুহূর্তটির কথাই মনে করুন এবং আপনি কতটা ভাগ্যবান তা উপলব্ধি করুন।
শরীরচর্চা
শরীরচর্চা করলে সারাদিন আপনি তরতাজা থাকবেন এবং আপনার শরীরে স্ট্রেস হরমোন নি:সরণ কমবে। এতে রাতে আপনার ভালো ঘুম হবে। দুপুর ১ টা ও সন্ধ্যা ৭ টায় শরীরচর্চা করা লোকজনের তুলনায়, সকাল ৭ টা থেকে আধা ঘন্টার জন্য শরীরচর্চা করা লোকজন তুলনামূলকভাবে সহজে ভালো ঘুমাতে পারে। এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ লোকে ভালো ঘুম হয়।
দুপুরের পর তেতো খাবেন না
তেতো স্বাদের খাবারে এক ধরণের উত্তেজক পদার্থ থাকে। তা আপনার শরীরে চার থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত থেকে যাবে। সেজন্য বিছানায় যাবার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার শরীরে তেতো স্বাদের উত্তেজক পদার্থ নেই। কফি ছাড়াও চা, চকলেট ও স্ফ্ট ড্রিংকসের মধ্যে কিছু তেতো স্বাদের উপাদান থাকে, যা আপনার ঘুম নষ্ট করতে পারে।
রাত্রে তারাতরি খাবার খান
রাতের খাওয়া খাবার হজমের জন্য কমপক্ষে দু’ঘন্টা লাগে। রাতে যত বেশি খাবেন, হজমের জন্য তত বেশি সময় লাগবে। বেশি খেলে আপনার শরীর বিশ্রাম পাবে কম। তাই যত আগে সম্ভব রাতের খাবার শেষ করুন। মেলাটোনিন ও সেরোটোনিন সৃষ্টির জন্য আপনার মস্তিষ্কে যথেষ্ঠ প্রোটিন লাগে। মেলাটোনিন ও সেরোটোনিন ঘুমের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রোটিন হজমের জন্য।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন