রোজা রেখেই খেলা চালিয়ে যান বিশ্বসেরা ফুটবলার বেনজামা ও ওজিল

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুই মুসলিম খেলোয়াড় ফ্রান্সের করিম বেনজামা ও জার্মানীর মেসুত ওজিল খুব সহজে রোজা ভাঙেন না। কঠোরভাবে রোজার নিয়ম কানুন মেনে চলেন। প্রায়ই রোজা রেখেই খেলা চালিয়ে যান। এজন্য| রোজার মাসে বিশ্বজুড়েই মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে অনেকটা পরিবর্তন আনতে হয়।

এ বছর রোজার মাসে পড়েছে বিশ্ব ফুটবলের আন্তর্জাতিক সূচি। বর্তমানে অনেক অমুসলিম দেশের ফুটবল দলেও মুসলিম খেলোয়াড় দেখা যায়। যেসব দলে মুসলিম খেলোয়াড় বেশি সেসব দলের ম্যানেজারদের এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় ভিন্নভাবে।

কারণ, খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেকে কঠোরভাবেভাবে রোজার নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। প্রত্যুষ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা কোনো কিছু খায় না। গত কয়েক বছর যাবৎ রোজা এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বড় বড় আসর চলে।

আবার জার্মানির বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় আলজেরিয়ার অনেক খেলোয়াড় রোজা রেখেই খেলায় অংশ নেন। যদিও ধর্মীয় নেতারা ফুটবলারদের রোজা না রাখার ব্যাপারে মত দিয়েছিলেন। কারণ, ফুটবল দলতো তখন সফরে অনেক দূরের দেশে ছিলেন। সেদিন খেলার সময় হাঁপিয়ে গিয়েছিলেন আলজেরিয়ার গোলরক্ষক রাইস। তিনি বিরতির সময় খেজুর ও পানি খেয়ে রোজা ভাঙতে বাধ্য হন।

সম্প্রতি জেরুজালেমের কাছে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ফিলিস্তিন ও ওমানের খেলা আয়োজনে কর্তৃপক্ষকে অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হয়। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন খেলাটি শুরুর সময় ঠিক করেছিল রাত পৌনে ১০টায়। এরপর সেটা একঘণ্টা পিছিয়ে পৌনে ১১টায় করা হয়। তারপরও খেলাটি শুরু হয় রাত ১১টায়। এভাবে সময় পরিবর্তন করা হয় যাতে সমর্থকরা ইফতারি করে খেলা দেখতে যেতে পারেন। কিন্তু এতে আবার যেসব সমর্থক দূর থেকে আসেন তাদের অসুবিধা হয়।

এছাড়া ফিলিস্তিন ও ওমান উভয় দলের খেলোয়াড়রা অনুশীলন করেন রাতে। তাদের খাবার ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। ফিলিস্তিনের একজন চিকিৎসক বাদের আকেল রোজার সময় জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য দৈনন্দিন খাবার ও প্রশিক্ষণের সময় ঠিক করে দেন।

তিনি বলেন, আমরা ইফতারির পর খেলোয়াড়দের অন্তত তিন লিটার পানি করার জন্য বলে থাকি, যাতে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি না হয়। অন্য সময় খেলোয়াড়রা হোটেলে বুফে সিস্টেমে খাবার খেয়ে থাকে। কিন্তু রোজার সময় খেলোয়াড়দের নজরদারিতে রাখা হয় যাতে অতিরিক্ত না খেতে পারে তারা। এ জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার দেয়া হয় থালায়। আর খেলোয়াড়দের খাদ্য তালিকায় সমপরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যেমন- ভাত, সবজি বা সালাদ। এমন খাবার দেয়া হয়, যা সহজে হজম হয় এবং শক্তিও জোগায়।

প্রায় সময়ই কোচরা খেলোয়াড়দের ইফতারির প্রায় এক ঘণ্টা আগে জিমে পাঠায়, যাতে রোজা শেষে গৃহীত খাবার দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে। কারণ, সারা দিন তেমন কাজ না করায় শরীরের অঙ্গগুলো কম কাজ করে।

ডা. আকেল বলেন, খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দিনের বেলায় তারা যেন একেবারে নিশ্চল না থাকে। এজন্য খেয়াল রাখতে হবে যাতে দিনের বেলায় তারা যেন বেশি না ঘুমায় (যেটা রোজার দিনে সাধারণত বেশি ঘটে থাকে)।

ফিলিস্তিন ফুটবল দল অনুশীলন শুরু করে রাত ১১টায়। সেখান থেকে তারা হোটেলে ফিরে বলফ পানিতে গোসল করেন এবং শরীরের যত্ন নেন (ফিজিও ওয়ার্ক)। তারপর রাত পৌনে তিনটায় সাহরি গ্রহণ করেন।

ওমান দলের ডাচ কোচ পিম ভারবিক এর আগে মরক্কোর অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল দলের দায়িত্ব থাকাকালে রোজার সময় এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তখন অনুশীলনের সময় পরিবর্তন করা হয়, যাতে খেলোয়াড়রা মানিয়ে নিতে পারেন। ইংল্যান্ডের দল রিডিংয়ের গোলরক্ষক আলি আল হাবসি ওমানের অধিনায়ক।

তিনি মনে করেন, অনেক রাতে খেলা শুরু করা খেলোয়াড়দের জন্য ভালো হয়। এতে ১৭ ঘণ্টা রোজা পালনের পর শরীর ঠিক হতে যথেষ্ট সময় পায়। হাবসি ১৪ বছর যাবৎ ইউরোপের বিভিন্ন দলে খেলছেন। তবে একবারই তিনি রোজা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। সেটা এ মাসেই রিডিংয়ের চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের প্লে-অফ ম্যাচে হাডার্সফিল্ড টাউনের বিপক্ষে খেলায়।

অবশ্য ফিলিস্তিন দলের বিষয় কিছুটা ভিন্ন। তাদের দলে পাঁচজন খ্রিষ্টান খেলোয়াড় আছে, যাদের রোজা রাখতে হয় না। এদের মধ্যে চারজন চিলিতে জন্ম নেয়া। এদের জন্য রামাল্লাহর প্লাজা হোটেলে সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার আগের মতোই থাকে। তবে যারা রোজা রাখেন তারা আলাদা রুমে থাকেন।

যেখানে রোজা রাখা খেলোয়াড়রা সারা দিন ক্ষুধা আর তৃষ্ণায় কাতর থাকে, সেখানে রোজা যারা রাখে না তাদের সময় কাটে একঘেয়েমিতে। অনেকে সময় কাটাতে জিমে পড়ে থাকেন। অনেকেই রোজাদারদের মতো রাতে জেগে থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটান। কঠোর অনুশীলন ও বরফ পানিতে গোসলের পর সাহরির সময় হোটেলের টপফ্লোরে খেলোয়াড়রা জড়ো হয়ে হাসি-ঠাট্টা করেন।

ফয়সাল আল হুসাইনি স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটে ফিলিস্তিন আর ওমানের খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। ১৮০০০ দর্শক আসনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ভরা ছিল দর্শকে। এতে জয়ী হয় ফিলিস্তিন দল।