‘রোনালদোর সঙ্গে কখনও বন্ধুত্ব হবে কি না জানি না’

সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জয়ের পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে একই কাতারে সামিল হয়ে গেলেন লিওনেল মেসি। ইউরোপিয়ান ফুটবলে গোলদাতার লড়াইয়ে এখন দু’জন অবস্থান করছেন সমান অবস্থানে। দু’জনই জিতেছে চারটি করে গোল্ডেন বুট।

গোল্ডেন বুট জেতার পর মাদ্রিদ ভিত্তিক জনপ্রিয় ক্রীড়া দৈনিক মার্কা মুখোমুখি হয়েছিল মেসির। সেখানেই প্রশ্নোত্তর পর্বের এক পর্যায়ে মেসি মন্তব্য করেন, তিনি আসলে জানেন না কখনও রোনালদোর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হবে কি না।’

মার্কার সঙ্গে মেসির সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের সামনে..

প্রশ্ন : ১৩ বছর বয়সে যখন বার্সায় এসেছিলেন তখন কী উদ্যম কাজ করছিল আপনার মধ্যে?
মেসি : আমার স্বপ্ন এবং ইচ্ছা এখনও একই রয়েছে। অবশ্যই, আমি বার্সায় আসার পর থেকে অনেক বছর কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে মাঠের ভেতর এবং বাইরে অনেক কিছুই ঘটে গেছে।’

প্রশ্ন : কিভাবে পারিবারিক জীবনে পরিবর্তন আনলেন। কিংবা আনতোনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থিতি আনলেন। বাচ্চাদের জন্মের বিষয়েও বলুন।
মেসি :
 যে কোনো দিক থেকেই এটা আমার জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন। আপনি ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করতে পারেন। তবে সত্য কথা হচ্ছে, একজন বাবা হওয়া জীবনের যে কোন দিক থেকে সবচেয়ে সুখের একটি বিষয়। আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে এবং আরেকজনের অপেক্ষায় আছি। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে একই অনুভুতি। আশাকরি তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে সেটাই থাকবে।

প্রশ্ন : কিভাবে সন্তানদের সঙ্গে প্রতিটি দিন অতিবাহিত করেন? কোনো কোনো ছবিতে আমরা দেখি, থিয়াগোর সঙ্গে দারুণ মুহূর্ত কাটাচ্ছেন!
মেসি : আমার প্রতিটি দিনই এখন বাচ্চাদেরকে ঘিরেই আবর্তিত। সকাল বেলায় আমি তাদেরকে স্কুলে নিয়ে যাই। যখন আমি প্র্যাকটিস থেকে ফিরি, তখন সোজা চলে যায়ই থিয়াগোকে স্কুল থেকে আনার জন্য। যখন তার স্কুল শেষ হয়ে যায়, তখন আমি এবং সে মিলে ডিনার পর্যন্ত আনতোনেল্লা ও মাতেওর সঙ্গে সময় কাটাই। এরপর তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দেই। এভাবেই আমাদের স্বাভাবিক জীবন কেটে যাচ্ছে।

প্রশ্ন : তারা কী বাড়িতে আপনার সঙ্গে ফুটবল খেলতে চায়?
মেসি:
 তারা কখনোই আমার সঙ্গে বাড়িতে ফুটবল খেলার আবদার করে না। যদিও তারা নিজেরা নিজেরা ফুটবল খেলে। এমনকি মাতেও’ও ফুটবল খেলার চেষ্টা করে। থিয়াগো তো এখনই ট্রেনিংয়ে যাওয়া শুরু করেছে। তবে, তারা কখনও আমাকে সঙ্গে নিয়ে ফুটবল খেলার আবদার করে না।

প্রশ্ন: এমনকি কখনও যদি মাতেওর দিকে আপনি বল থ্রো করেন, তখন সে আপনার দিকে ডান হাত দিয়ে না বাম হাত দিয়ে বল থ্রো করে?
মেসি: ডান হাত দিয়ে। তারা দুই ভাই’ই ডান হাতি।

প্রশ্ন : ঘরের ফেরার পর ফুটবল নিয়ে কী আপনি আনতোনেল্লার সঙ্গে আলাপ করেন?
মেসি:
 ফুটবল নিয়ে অনেক ছোট-খাট বিষয় নিয়েও আমরা আলাপ করি। ক্লাব কিংবা জাতীয় দলে বড় কোনো কিছু ঘটলেও সেটা আলোচনার বিষয় থাকে ঘরের আলাপে।

প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী আপনার? ফুটবল ছাড়ার পর কী কোচ হবেন, নাকী শান্ত-নিরিবিলি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। নাকি গলফ খেলবেন?
মেসি: আমি এখনও জানি না, আসলে কী করবো। আমরা প্রায় সময়ই পারিবারিকভাবে এ নিয়ে আলাপ করি যে, যখন ফুটবল ছেড়ে দেবো, তখন সময়টা কিভাবে কাটাবো। তবে কোনো কিছুই আসলে নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আমি সব সময়ই বলে আসছি, নিজেকে কখনোই কোচ হিসেবে দেখতে চাই না। কারণ এ নিয়ে আমার কোনো টানই নেই। হয়তো বা আগামী কয়েক বছরে এটার পরিবর্তন হবে। তবে, এখনও আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের বেশ কয়েক বছর বাকি রয়েছে। যখন দেখবো যে, ক্যারিয়ারের শেষ সময় এগিয়ে আসছে, তখন না হয় চিন্তা করা যাবে।

প্রশ্ন: আপনার একজন সতীর্থ আমাকে (সাংবাদিককে) বলেছিলেন যে, আপনি নাকি বেশ শক্ত-সমর্থ। এটা কী কঠোর শারীরিক পরিশ্রম এবং অনুশীলনের কারণে হয়েছে?
মেসি : এটা আসলে বিশেষ কিছু নয়। বছরের পর বছর আমি খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সচেতন। অনুশীলনের পর আমার পা গুলো শক্তিশালী হয়। তবে এ নিয়ে কখনও জিম করা লাগবে ভাবিনি।

প্রশ্ন: রান্না পছন্দ করেন?
মেসি: না, আমি কখনও রান্না করিনি। জানিও না। পছন্দও করি না। আমি হয়তো কিছু করতে পারবো। তবে এটাকে বাজারজাত (সবাইকে জানানো) করবো না।

প্রশ্ন: আপনার খাদ্যতালিকা থেকে এমন একটা কিছু বলুন যেটাকে সব সময় বাদ দিতে হয়; কিন্তু সেটা খুব পছন্দ করেন!
মেসি: এটা সম্ভবত চকোলেট। কারণ, চকোলেট আমার কাছে খুবই প্রিয় একটা জিনিস। এমনকি প্রতিটি সময় যেন আমি চকোলেটই চোখের সামনে দেখতে পাই।

প্রশ্ন: আপনি কী অন্য ফুটবল ম্যাচগুলো দেখেন?
মেসি: হ্যাঁ, অবশ্যই দেখি। এটা আমি পছন্দও করি। আমি সব সময়ই ফুটবল খুব অনুসরন করি।

প্রশ্ন: নির্দিষ্ট কোনো প্রতিযোগিতা অনুসরণ করেন?
মেসি: সাধারণত আমি সব খেলাই দেখি। তবে অবশ্যই স্পেন, ইংল্যান্ড এবং আর্জেন্টিনার লিগ বেশি দেখা হয়। যদিও আমার কর্মসূচিতে এটা খুব প্রভাব ফেলে। তবুও আমি খুব চেষ্টা করি সবকিছু দেখার জন্য।

প্রশ্ন: লিগ ওয়ানও দেখেন (নেইমার খেলে সেখানে)?
মেসি: হ্যাঁ, তাও দেখি। আগের চেয়ে এখন বেশি দেখা হয়।

প্রশ্ন : একজন লিওনেল মেসি হওয়া কী খুব সোজা?
মেসি: আমি আসলে একজন সাধারণ মানুষ। যে একটি পারিবারিক জীবন কাটাতে চায়। এটা সত্য যে, আমার কখনও কখনও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। এমন জায়গায় যেতে চাই, যেখানে মানুষ প্রতিটিক্ষণ আমাকে দেখতে চাইবে না।

প্রশ্ন: এখন তো আপনার কাছে চারটি গোল্ডেন বুট। কখন আপনি চিন্তা করেছেন, এই ট্রফিগুলো নিজের হাতে দেখতে পাবেন?
মেসি: সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এগুলো জিততে পেরেছি। এটা দেখতে এ কারণে খুবই সুন্দর বিষয়। তবে সব সময়ই বলেছি যে, আমি ব্যাক্তিগত অর্জনে কখনোই বিশ্বাসী নই। আমি স্বপ্ন দেখি আরও একটি লা লিগা কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জয়ের। ওইগুলোই আমি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তবে ঘরের শো কেসে এগুলো দেখতে সুন্দর। কারণ ওগুলোর অস্তিত্ব আছে।

প্রশ্ন: ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন। জার্মানিকে কী আবারও বিশ্বকাপের ফেবারিট মনে করেন? কিংবা আপনি কী চান অন্য কেউ আগামী বিশ্বকাপ জিতুক! যেমন পর্তুগাল, স্পেন কী চ্যালেঞ্জিং হতে পারে?
মেসি : জার্মানি অবশ্যই অন্যতম ফেবারিট। সব সময়ই তারা ফেবারিট থাকে। তবে আরও বড় বড় দল রয়েছে, যারা বিশ্বকাপ জিততে পারে। যেমন ব্রাজিল, স্পেন, ফ্রান্স। তারা এখন অনেক শক্তিশালি এবং দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে নাম লিখিয়েছে।

প্রশ্ন : রিয়াল মাদ্রিদ তো এখন দারুণ সমস্যায়। আপনি তাদেরকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন।
মেসি :
 এটা খুবই সাময়িক। এমন নয় যে এবারই প্রথম হয়েছে এমন। লা লিগায় এর আগেও রিয়াল এমন সমস্যায় পড়েছিল। তবে মৌসুম শেষে তারা ঠিকই কামব্যাক করে। কারণ, তাদের দলটা শক্তিশালী। তাদের কাছে যেসব খেলোয়াড় আছে, তারাও বিশ্বমানের।

প্রশ্ন: ব্যালন ডি’অরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই আপনার সেরা প্রতিদ্বন্দ্বী? নাকি এখানে অন্য কেউ প্রবেশ করার চান্স আছে?
মেসি : বর্তমান ফুটবল বিশ্বে, অনেক বড় বড় ফুটবলার রয়েছেন। যারা এই ব্যালন ডি’অর জিততে পারেন। তবে, সাম্পতিক সময়ে এটা হয়তো দু’জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন নেইমার, কাইলিয়ান এমবাপ্পে এবং লুইস সুয়ারেজ রয়েছেন। যারা এই পুরস্কারের জন্য লড়াই করতে পারে।

প্রশ্ন: কিছুদিন আগে ক্রিশ্চিয়ানো বলেছিলেন, ভবিষ্যতে আপনারা দু’জন ভালো বন্ধু হতে পারেন। আপনি কী মনে করেন, এটা সম্ভব?
মেসি: আমি আসলে জানি না, এটা কখনও সম্ভব হবে কি না। বন্ধুত্ব তৈরি হয়, একসঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানোর কারণে এবং একে অপরকে জানার মধ্য দিয়ে। আমাদের মধ্যে আসলে কোনো সম্পর্কই নেই। শুধুমাত্র আমরা একে অপরকে দেখি পুরস্কার বিতরনী নানা অনুষ্ঠানে। ওই সময়ই শুধু দু’জনের কথা হয়। সব কিছুই ভালো। তবে আমাদের জীবন কখনওই নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করবে না।