লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে স্কুলমাঠে হাঁটু পানি; দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

এক প্রান্তে প্রাথমিক, অন্য প্রান্তে মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মাঝে বিশাল মাঠ। তবে যাদের জন্য এই মাঠ সেই শিক্ষার্থী বা স্থানীয় শিশু-কিশোররা কখনো এই মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না! বছরের বেশিরভাগ সময় এই মাঠে জমে থাকে পানি। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় সেখানে। বছরের বাকিটা সময় থাকে কাদায় পরিপূর্ণ।

দীর্ঘদিন ধরে এমনই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় এবং কাকিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১০৩৪ জন শিক্ষার্থী। জলাবদ্ধ মাঠের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জামাকাপড় যায় ভিজে। সবচেয়ে বিপদে পড়েন নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ভেজা জামাকাপড়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিবাহিত করেন তারা। বছরের পর বছর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হলেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অল্প কিছু অংশে পানি না থাকলেও তা কর্দমাক্ত ও স্যাঁতসেঁতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে মাঠে নামতে পারছে না। অনেক শিক্ষার্থীদের ভিজে ক্লাসে যেতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে শ্রেণিকক্ষে যাতায়াতের সময় শিক্ষার্থীরা অনেকেই পা পিছলে পড়ে যায়। এতে নোংরা হয় তাদের জামাকাপড়, বই খাতা ভিজে যায়।

এছাড়া মাঠে জমে থাকা কাঁদাপানির কারণে শিক্ষার্থীরা শরীরচর্চা ও জাতীয় সংগীত গাইতে পারে না। এতে করে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যালয় মাঠের জলাবদ্ধতা নিরসনের জোর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

কাকিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান লাম, আরশি আক্তার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুপায়ন বর্মন, সামিয়া আক্তার ও তৃতীয় শ্রেণির রুমি আক্তার বলেন, তারা বাড়িতে বদ্ধ পরিবেশে থাকে, আবার বিদ্যালয়ে এসে শ্রেণিকক্ষেও একই অবস্থা। দ্রুত মাঠটি সংস্কার করার দাবি জানান তারা।

স্থানীয়রা জানায়, মাঠটি শুধু স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরই নয়, গ্রামের যুবকদেরও খেলাধুলার জন্য। মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করা এবং পানি নিষ্কাশনের নালা বন্ধ করে পুকুরসহ বাড়িঘর নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবভিত্তিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

কাকিনা মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আশা জানান, এই বিদ্যালয় ১০৩৭ শিক্ষার্থী রয়েছে। বৃষ্টির পানি বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে নিষ্কাশনের পথ না থাকায় এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয়দেরকে নিয়ে লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেছিলাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় পরিদর্শনও করে গেছেন কিন্তু আজও এ সমস্যার সমাধান হয়নি।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ পাল বলেন, এই স্কুলে ৩৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি যোগদান করার ছয় বছর হলো। যোগদানের পর থেকে দেখি বর্ষার সময় মাঠে পানি জমে থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা শারীরিক শিক্ষা ও মাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে লিখিত ভাবে এবং অত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাহির তাহু জানান, আমি জলাবদ্ধতার বিষয়টি জানি না। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ড্রেনের ব্যাবস্থা করে জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা করা হবে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক দ্বয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে মাঠ থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।