শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপগুলোর অন্যতম ‘বঙ্গবন্ধু-১’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’। এটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামনে অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেলো। বাংলাদেশের এ স্যাটেলাইট শুধু মহাশূন্যে নয়, পৃথিবীজুড়ে আলো ছড়াবে। বাংলাদেশকে দেবে বিশেষ পরিচিতি।
‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট দিয়ে টেলিভিশন সম্প্রচারসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব কাজ অত্যন্ত সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কতগুলো সাহসী পদক্ষেপের অন্যতম। আমাদের এখন অন্যদের কাছ থেকে স্যাটেলাইটের ভাড়া দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল চালাতে হচ্ছে। এজন্য বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে মাসে ৩০ হাজার ডলার খরচ করতে হয়। বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এখন থেকে এ অর্থ আমাদের দেশেই থেকে যাবে।’
‘এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের বড় হুমকি হ্যাকিং। নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকলে এ প্রবণতা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দশ্যে ঢাকা ত্যাগের আগে বলেন, ‘এ স্যাটেলাইট হবে আমাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। অনুপ্রাণিত হবে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে স্যাটেলাইট প্রকৌশলী হওয়ার আগ্রহ তৈরি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা আরও সম্প্রসারিত হবে। এটা দেখে ছেলেমেয়েরা বলবে, বড় হয়ে আমরা স্যাটেলাইট প্রকৌশলী হবো।’
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পরিচিতি : ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ কৃত্রিম উপগ্রহটি একটি জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট বা ভূস্থির উপগ্রহ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ২৬ কু-ব্যান্ড এবং ১৪ সি-ব্যান্ড মিলিয়ে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য রাখা হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণ চুক্তি : ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, স্যাটেলাইটের কাঠামো, উৎক্ষেপণ-ব্যবস্থা, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনা সহায়তা ও ঋণের ব্যবস্থা করবে ফ্রান্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ফ্রান্সের থুলুজে স্যাটেলাইটটির মূল কাঠামো তৈরির কথা দেয় থ্যালেস।
সরকারের অর্থায়ন : ২০১৫ সালের মার্চে একনেকে দুই হাজার ৯৬৭.৯৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। যার মধ্যে সরকারি অর্থ এক হাজার ৩১৫.৫১ কোটি টাকা এবং বিদেশি অর্থায়ন ধরা হয় এক হাজার ৬৫২.৪৪ কোটি টাকা। বিটিআরসি কৃতিত্বের দাবি আনতে পারে যে, শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি দুই হাজার কোটি টাকায় শেষ হচ্ছে।
ইতিহাসের অংশ থ্যালেস : দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ পায় ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। ২০১৫ সালের নভেম্বরে তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ডিজাইন এবং নির্মাণের চুক্তি হয়। চুক্তিটি ছিল এক হাজার ৯৫১.৭৫ কোটি টাকার।
কক্ষপথ কেনা : স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ এবং তা কক্ষপথে রাখার জন্য রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়। মহাকাশে এ কক্ষপথের অবস্থান ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সম্পাদিত চুক্তির ভিত্তিতে প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য এই কক্ষপথ কেনা হয়।
ব্যবসায়িক পরিকল্পনা : স্যাটেলাইটটির ক্ষমতার অর্ধেক দেশের বাজারে ব্যবহার হওয়ার পর বাকিটা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সাত বছরের মধ্যে খরচ উঠে আসবে। তবে এখনও সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক পরিকল্পনার বিষয়টি জানা যায়নি।
দিগন্ত প্রসারিত কভারেজ : স্যাটেলাইটটির কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজাকিস্তান পর্যন্ত। বাংলাদেশের অবস্থান ৯০ ডিগ্রিতে হলেও বঙ্গবন্ধু-১ এর অবস্থান হচ্ছে আমাদের অবস্থান থেকে বেশ খানিকটা দূরে। দুটি ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মিত হয়েছে গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে।
সেবার পরিসর : ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে সবচেয়ে অধিকতর কার্যকার হবে স্যাটেলাইটি। বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অন্য দেশের স্যাটেলাইট থেকে কানেকটিভিটি কিনে ব্যবহার করছে। সেখানে নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবহারে ওই কানেকটিভিটির অর্থ বাংলাদেশেই থেকে যাবে। এছাড়া দুর্গম অঞ্চলে সাশ্রয়ী কানেকটিভিটি নিশ্চিতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বাধিক ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু-১।
ন্যানো স্যাটেলাইট দিয়ে যাত্রা শুরু : ব্র্যাক অন্বেষ ২০১৭ সালের ৪ জুন দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট যে লঞ্চার উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে তারাই ব্র্যাক অন্বেষা উৎক্ষেপণ করে। অন্বেষার গ্রাউন্ড স্টেশন মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই।
মর্যাদার আসন : প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, থ্যাইল্যান্ড, শ্রীলংকার নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। এখন বাংলাদেশও মর্যাদার এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। নেপাল-ভুটান ন্যানো স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে মিয়ানমারও বাণিজ্যিক স্যাটেলাইটের কাজ শুরু করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন