সরকারকে পদত্যাগের জন্য ৭ দিন সময় দিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

সরকারকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একই সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া সব বিরোধীদলীয় নেতাকে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতির মধ্যস্থতায় সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে সংলাপের আহ্বানও জানিয়েছে ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দল।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ থেকে এসব ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি মুহম্মদ রেজাউল করীম।

মুফতি মুহম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। যত নিবন্ধিত দল আছে এবং প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপিসহ সব ওলামায়ে কেরামকে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার এসব দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনরত সব বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের সব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থন ঘোষণা করছে।

আজ বেলা দুইটায় শুরু হয় দলটির মূল সমাবেশ। একে একে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে শ্রমিক আন্দোলন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিরোধীদলীয় নেতাদের ধরপাকড়সহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়। সব শেষে সভাপতির বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠেন দলটির আমির মুফতি রেজাউল করীম।

রেজাউল করীম বলেন, ‘সরকারের কাছে একটা মেসেজ দিতে চাই, সেই ’১৮ সালের মতো নির্বাচন ’২৪ সালে এই দেশে হবে না। আজকে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে সবার এক দফা এক দাবি—একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। আর এই দাবি কি ন্যায্য নাকি অন্যায্য? ৩ নভেম্বর সরকারের মেয়াদ শেষ। তাই আমরা এই দিনে এই মহাসমাবেশ করেছি। আমাদের এক দাবি—জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে।’

সরকার বিরোধী মত দমন করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার বিরোধী দলকে দমন করার জন্য আমাদের বাসকে আটকে দেওয়া হয়, জনসভায় শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু যখন পানির স্রোত বয়ে যাবে, তখন কেউ কিন্তু এই স্রোতকে থামিয়ে রাখতে পারবে না।’

ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল রাত থেকেই সারা দেশের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে সমবেত হতে থাকেন। উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট প্রান্তে আয়োজিত এই সমাবেশে ছিল ইসলামী ছাত্র, যুব ও শ্রম আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তারা জাতীয় সরকারের দাবিতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগামী রোধে, শ্রমিক আন্দোলন দমনের বিরোধিতা করে এবং বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছিলেন।

যখনই আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে, তখনই রাজপথে নেমে আসতে হবে। নেতা-কর্মীদের এমন আহ্বান করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ফয়জুল করীম বলেন, ‘আমাদের ভ্যাট, ট্যাক্সের টাকা দিয়ে অস্ত্র বানিয়ে তা আমাদের ওপরই চালাচ্ছে এই জালেম সরকার। যে সময় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় নিজের বাচ্চাকে বিক্রি করে দিচ্ছে, যে সময় মানুষ অভাবে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাচ্ছে। তখন এই জালেম সরকার তাদের ওপর নির্যাতন ও গুলি চালাচ্ছে। তবে জনগণ এই নির্যাতনের জবাব দেবে। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে চলছে। মুক্তিযুদ্ধের মানে কী, স্বাধীনভাবে চলা এবং মতপ্রকাশ করা। কিন্তু সরকার আমাদের সাধারণ মানুষের থেকে স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।’

মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন যে কর্মসূচি দেবে, তাতে ইসলামবিরোধী কোনো কাজ থাকবে না। হরতাল করে কী লাভ হবে? এখন যে হরতাল হয়, সেটি হরেকতাল। একতাল নয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আর কয়টা লাশ পড়লে আপনি ক্ষমতা ছাড়বেন? সময় এখনো সামনে আছে। আমাদের আমির আলটিমেটাম ঘোষণা করবেন। যদি কাজ না হয়, তাহলে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচি দেব ইনশা আল্লাহ।’

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সব বিরোধী মতকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যে সংবিধানকে ধ্বংস করেছে। নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং আইন বিভাগকে ধ্বংস করেছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করেছে। বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারকে বিশ্বাস করে না, জনগণ তাদের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। সরকার যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাহলে সংলাপ ডেকে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমেদ, উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুল আউয়াল পীর সাহেব খুলনা, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, উপদেষ্টা মুফতি এসহাক মো. আবুল খায়ের, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম।