সরকারের ব্যর্থতায় নৌকা ডুবে গেছে : খালেদা
সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষমতাসীন দলের ‘নৌকা ডুবে গেছে’বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শনিবার রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েলসে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) আয়োজিত এক শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাগপার প্রয়াত সভাপতি সফিউল আলম প্রধানের শোকসভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘নিজেরা হেলিকপ্টারে বিভিন্ন জায়গায় উদ্বোধনের নামে যাচ্ছেন, কিছু উদ্বোধন করছেন। আর সেখানে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের নামে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। নৌকা যে ডুবে গেছে- এটা বুঝতে পারছেন না? এই নৌকা ডুবে গেছে, এই নৌকাকে আর আপনার হাজার লোক দিয়ে টেনেও তুলতে পারবেন না।’
‘নৌকার সঙ্গে যাদের রেখেছেন, আশপাশে যারা আছে, আপনার ডানে-বায়ে যারা আছে, যারা অন্য দল করে আপনার দলে এসেছে-তারা কী জিনিস। আপনি কিন্তু নিজেই বলে দিয়েছেন তারা কী খায়, কী রকম তাদের লাইফ স্টাইল। এসব লোককে দিয়ে দেশের কিছু হবে না, এরা দেশের কিছু করতে পারে না। আপনিও পারবেন না।’
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি বলব একটা নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনুন। সেই নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, হাসিনার অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। কোনো দল অংশগ্রহণ করবে না। হাসিনাকে বাদ দিতেই হবে, ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতেই হবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, আগামীতে সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে প্রত্যেকে ভোট দিতে যাবে। সকলে এটা চায়, সারা পৃথিবীর মানুষ এটা চায়। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে এই নির্বাচন হবে।
সেই নির্বাচনের ফলাফল আপনারা বুঝতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট জিতে এসে এদেশের মানুষকে ভিশন ২০৩০ এ যা যা ওয়াদা করেছি, তার সব কিছু করব, আরও কিছু করার আছে, সেটাও করব।
তিনি বলেন, সামনে ঈদ। এই ঈদে মানুষ গ্রামের বাড়ি যায়। দেখেছেন রাস্তাঘাটের যে দুরবস্থা। গতকাল পত্রিকায় ছবি দিয়েছে পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা দিয়ে ১০ ঘণ্টায়ও অতিক্রম করতে হচ্ছে। আর যানজট থাকলে ১৫-২০ ঘ্ণ্টা লেগে যায়। গাড়িতে যাত্রীদের কী দুরবস্থার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
পাবর্ত্য জেলায় পাহাড়ধসে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে পাহাড়ধসে মানুষগুলো মারা গেল, তাদের উদ্ধার করা, তাদের পুনর্বাসনে বর্তমান সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা আমরা দেখছি না, কোনো দায়িত্ববোধও দেখছি না।
জনগণের নয়, আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত। চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটল ১০টার কিছু পরে ঘটল, সেটা জানার পরও দুপুর ১২টায় তিনি বিদেশ সফরে গেলেন। কেন? দেশে এতো বড় ঘটনা, এখন পর্যন্ত ১৫২ জন মারা গেছে, আরও হয়তো মারা যাবে কিংবা অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেন না। এতো বড় ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বিদেশে যান। এটা কী জনগণের প্রতি তার (শেখ হাসিনা) দায়িত্ববোধ? আজকে (শনিবার) তিনি দেশে ফিরেছেন। এখন হয়তো মায়াকান্না দেখাবেন।
চালের মূ্ল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, চালের দাম যে এতো বেড়েছে তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার, কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? দেশের মানুষ সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চাল ৫০ টাকা কেজিতে কিনছে, কেন?
এছাড়া সব জিনিসের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারেনি সরকার- যোগ করেন তিনি।
বাজেটের সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, বাজেটে কত কর বাড়িয়েছে, ভ্যাটের পরিধি বাড়িয়েছে। যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব করেছেন, সেটার কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যাংকে এক লাখ টাকা জমা রাখলে সেখানে ৮শ টাকা কেটে নিয়ে যাবে।
ব্যাংকের টাকা চুরি করেছে, দুর্নীতি হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের টাকা লুট হয়েছে, এখন মানুষের পকেট কেটে টাকা দেয়া হচ্ছে ওই ব্যাংককে। এসব বন্ধ করুন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। আমি জনগণের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আওয়ামী লীগের চেহারা আপনারা ভালোভাবে দেখে নিয়েছেন। তাদের হাত থেকে বাঁচতে চান, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, গরিব-সাধারণ মানুষের পক্ষে, সমস্যা-সমাধানের পক্ষে, দেশের শান্তি-উন্নয়নের পক্ষে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে, তাদের পক্ষে থাকুন। সেই রকম দলই হলো বিএনপি ও ২০ দল। যাদের দেশপ্রেম আছে, প্রতিটি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে।
সভায় জাগপার প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গত ২১ মে পরলোক গমন করেন এই নেতা। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন খালেদা জিয়া।
জাগপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেহানা প্রধানের সভাপতিত্বে সভায় জোট নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহীম, এনপিপি`র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তাজা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এমএ রকীব, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন বক্তব্য দেন।
অালোচনা সভায় ২০ দলীয় জোটের শরিক মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভার পর মূলমঞ্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাগপার সদ্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের সহধর্মিণী ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক রেহানা প্রধান, তার মেয়ে ব্যারিস্টার তাহমিনা প্রধান, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইফতারে জাগপার জ্যেষ্ঠ নেতা আসাদুর রহমান খান, আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, রাকিব উদ্দিন চৌধুরী মুন্না, খন্দকার আবিদুর রহমান, নিজামউদ্দিন অমিত, শেখ জামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা বেলায়েত হোসেন মোড়ল, শেখ ফরিদ উদ্দিন, নজরুল ইসলাম বাবলুও ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন