সরকার বিএনপির একটা শর্তও মানবে না : জাপা এমপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে সাতটি দাবি জানিয়েছে সরকার তার একটাও মানবে না বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। দুই পক্ষ বসে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পারবে-এমনটাও মনে করেন না তিনি।

সংবাদভিত্তিক নিউজ চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের টক শো ‘জনতন্ত্র-গণতন্ত্রে’ অংশ নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এই কথা বলেন।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করে বিএনপি। সেই দাবির পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তি, নাশকতার মামলার আসামিদেরকে গ্রেপ্তার না করা আর নতুন করে মামলা না দেয়া, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন, ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, ভোটে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি যোগ হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় এই দাবিগুলো তুলে ধরে দলটি।

তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির দাবিতে পাত্তা দেয়া হচ্ছে না। এমনকি ২০১৪ সালে বিএনপিকে ভোটে নিয়ে আসতে সরকারি দলের নানা উদ্যোগ ও চেষ্টা থাকলেও এবার তার কিছুই নেই। আর ভোটে আসতে ‘দাওয়াত’ দেয়া হবে না-সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টকশোতে জাতীয় পার্টির নেতা ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবিসহ বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী যা দেখা যাচ্ছে সরকার তাদের একটা শর্তও মানবে না।’

‘দুইটা দলই বিপরীত অবস্থানে আছে। কারও কথাই তো কাছাকাছি আসে না। মাঝে বসে দুইটা দলকে নিয়ে আমরা কিছু করব, তার পরিবেশ পরিস্থিতি এখনও দেশে সৃষ্টি হয়নি।’

নির্বাচন যত নিকটে আসবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়বে বলেও মনে করেন জাতীয় পার্টির নেতা। বলেন, ‘আমার মনে হয়। নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে না।’

বেকায়দায় থাকলেও নির্বাচন করতে হয় বলে মনে করেন ফিরোজ রশীদ। বলেন, ‘৯০ সালে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলো, আমরা কারাগারে গেলাম। কারাগারে থেকেই আমরা নির্বাচন করেছিলাম। তখন কিন্তু আমরা বলি নাই, আমাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।’

‘বিচারপতি শাহাবুদ্দিন সাহেব যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ছিলেন, তখন নির্বাচনের আগে আমরা রেডিও টেলিভিশনে ভাষণ দেয়ার সুযোগ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের বলা হলো সুযোগ দেয়া হবে না। পরে হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা ভাষণ রেকর্ড করেছিলাম। জনগণকে বললাম আমাদের ৩০ মিনিট ভাষণ প্রচার হবে। কিন্তু সেই ভাষণ প্রচার হয়নি। দিলীপ বড়ুয়ার ভাষণ প্রচার হয় কিন্তু এরশাদ সাহেবের ভাষণ প্রচার হয়নি।’

‘স্রোতের বিপরীতে থেকে আমরা তিনটা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম, আমরা নির্বাচনমুখী দল, নির্বাচনে না গেলে আমরা টিকে থাকতে পারব না।…আমরা তৃতীয় হলাম, তারপর প্রতিটি নির্বাচনেই আমরা অংশ নিয়েছি।’

নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির শর্ত বিএনপি নেতার

টক শোতে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানও। তিনি মনে করেন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। সবার অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচনের পরিবেশের দিকে আগে তাকাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘জনগণকে নিশ্চয়তা দিতে হবে তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এবং তাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করবে। কিন্তু বিগত নির্বাচন সেটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতিটি ধাপ হতে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি বর্তমান সরকারের অধীনে।’

ভোটের আগে বিএনপির বিরুদ্ধে গায়েবি নাশকতার মামলা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আমান। বলেন, ‘গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির সমাবেশে যখন ব্যাপক জনসমাগম হলো তখন আমাদের নামে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মামলায় চার লক্ষ আসামি হলো।… মগবাজারে গাড়ি পোড়ানো এবং পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দলের মহাসচিবসহ আমাদের নামে গায়েবি মামলা দেয়া হলো।’

‘এ মামলাগুলো দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসতে পারে। যারা কাজ করবে সবার নামে মামলা করা হয়েছে, যাতে কেউ মাঠে থাকতে না পারে।’