২০২৩-২৪ বাজেটে ভূমি মন্ত্রণালয়
সরকার ভূমি সমস্যা সমাধানে নিরবচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে
বাংলাদেশের ভূমির স্বল্পতা, ব্যবস্থাপনাগত দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতার কারণে ভূমি ব্যবস্থাপনায় পূর্ণ সুশাসন নিশ্চিত করার চাহিদা দীর্ঘদিনের। এজন্য, প্রশাসনিক সংস্কার ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার ভূমি সংক্রান্ত সমস্যাদির কার্যকর সমাধানের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ তারিখ, জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বক্তৃতা দেওয়ার সময় সংসদে উপস্থাপিত লিখিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলা হয়েছে।
সরকারিভাবে প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের লিখিত জাতীয় বাজেট বক্তৃতা অনুসারে, Land Development Tax Management System এর মাধ্যমে ৩টি পার্বত্য জেলা ব্যতীত ৬১টি জেলায় ১ জুলাই ২০১৯ হতে শতভাগ ই-নামজারি নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, এ ৬১টি জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছর হতে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় এবং হোল্ডিং এন্ট্রি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবারের জাতীয় বাজেট বক্তৃতা অনুসারে, ৯ মার্চ ২০২৩ তারিখের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৬৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৩৩টি হোল্ডিং এন্ট্রি হয়েছে এবং ৫ কোটি ৫৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ৬৮৯ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। এছাড়া, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ডরুম সংস্কার, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন; উপজেলা ভূমি অফিসে রেকর্ডরুম স্থাপন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন এবং ১৩৭টি উপজেলা ভূমি অফিস ও ১৩৭টি উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে মুখচ্ছবি চিহ্নিতকরণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন টিভি ক্যামেরা স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে।
২০২৩-২৪ সালের জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ ভূমিসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সীমিত পর্যায়ে ঢাকা শহরে বিভিন্ন স্পটে ই-নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণ করা হবে। ভূমি বিষয়ক তথ্যসেবা প্রদানের জন্য কল সেন্টার (১৬২২২) চালু করা হয়েছে। ডাক বিভাগ দেশে-বিদেশে খতিয়ান ও ম্যাপ পৌঁছে দিচ্ছে।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গণের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ Land Information Management System (LIMS) সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে, যা তাদের অধিকাংশ কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে সহায়তা করছে। এ সফটওয়্যারে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নামজারি, ভূমি সংক্রান্ত মামলা ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা, বাজেট ব্যবস্থাপনা, রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা নিষ্পত্তি, মনিটরিং ড্যাশবোর্ড ইত্যাদি। চলতি অর্থবছরে ১লা বৈশাখ হতে সকল ভূমি উন্নয়ন কর ও নামজারি ফি এ-চালান সিস্টেমের মাধ্যমে জমা নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সরকারিভাবে প্রকাশিত লিখিত বাজেট বক্তৃতা, জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশন চলাকালীন পঠিত হিসেবে গণ্য করা হয়। লিখিত বাজেট বক্তৃতার সাথে আনুষঙ্গিক উপাত্ত সংশ্লিষ্ট দলিল ও তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনও থাকে।
(বাজেট উপাত্ত)
সংসদে উপস্থাপিত লিখিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট বক্তৃতার সাথে সরবরাহকৃত বিস্তারিত উপাত্ত সংশ্লিষ্ট দলিলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জন্য ২ হাজার ৪শ’ ৫৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত কর হিসেবে মোট ভূমি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জন্য ২ হাজার ৩শ’ ৮৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ কমে গিয়ে ১ হাজার ৯শ’ ৫০ কোটি ১৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সরবরাহকৃত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভূমি মন্ত্রণালয় যেসব উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭টি হচ্ছে: গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ প্রকল্প, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের মাধ্যমে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্থাপন প্রকল্প, চর ডেভেলপমেন্ট এন্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্প, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালনা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন শীর্ষক প্রকল্প, এবং মৌজা ও প্লটভিভভিক ভিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প।
(জলবায়ু বাজেট)
২০২৩-২৪ সালের বাজেট নথিতে পূর্ববর্তী বছরগুলির সাফল্যের ধারাবাহিতায় এবারো বিশেষায়িত জলবায়ু বাজেট প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য প্রকল্প এবং কর্মসূচি রয়েছে এমন ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জলবায়ু বরাদ্দ এবং ব্যয় বিশ্লেষণ প্রতিফলিত হয়েছে। এসব প্রকল্প ও উদ্যোগসমূহে তহবিল সরবরাহের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এবার ষষ্ঠ বারের মত জলবায়ু বাজেট প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
৬ষ্ট জলবায়ু বাজেট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও জনবান্ধব ভূমি সেবা প্রদান করা ভূমি মন্ত্রণালয়ের মিশন স্টেটমেন্ট। এ মন্ত্রণালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট কাঠামোয় উল্লেখিত কার্যাবলীসমূহের মধ্যে দুটি জলবায়ু সম্পর্কিত কার্যাবলী রয়েছে, যা হচ্ছে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ও বিধিসমূহ যুগোপযোগীকরণ’ এবং ‘ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম’।
মন্ত্রণালয়ের যেসব মধ্যমেয়াদী কৌশলগত উদ্দেশ্যের সাথে জলবায়ু সম্পৃক্ততা রয়েছে তা হচ্ছে: ‘বন্দোবস্তযোগ্য কৃষি খাসজমি চিহ্নিতকরণ এবং ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান’ এবং ‘ভূমিহীন অতি দরিদ্র এবং নিম্নবিত্তদের পুনর্বাসন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন’।
এ মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত জলবায়ু সম্পৃক্ত প্রকল্পসমূহ হচ্ছে: গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, এবং চর ডেভেলপমেন্ট এন্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্প। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু-সংক্রান্ত ব্যয়ের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট ৬৭.৯৬ কোটি টাকা, যা ২৪৫৯.৫৮ কোটি টাকার মোট বাজেটের ২.৭৬ শতাংশ।
জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনে পরিমাণ এবং শতাংশ উভয়ের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জন্য সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে নিম্নলিখিত বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্রে: ‘খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য’, ‘গবেষণা ও নলেজ ম্যানেজমেন্ট’, ‘সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’, এবং ‘দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদারকরণ ‘। ‘প্রশমন এবং লো-কার্বন ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘অবকাঠামো’ বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্রগুলিতে কোনও বাজেট বরাদ্দ নেই ভূমি মন্ত্রণালয়ের জন্য।
সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ রূপরেখার বাস্তবায়নের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ এর কথা তুলে ধরা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমি মন্ত্রণালয়ও স্মার্ট ল্যান্ড সার্ভিস বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন