সরকার যা করছে জানোয়ারও করে না : ড. কামাল

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সরকারের মামলা-হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকারের এসব কর্মকাণ্ডকে পাগলের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। সরকার যা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যা করছে তা জানোয়াররাও করে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

টক শোতে একজন নারী সাংবাদিক সম্পর্কে কটূক্তি করায় মানহানির একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের বেশির ভাগ জুড়েই ছিল এই প্রসঙ্গ।

তবে মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও বিএনপিপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি কামাল হোসেন।

মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি (মইনুল) হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে গেছেন। আমি অবাক হয়েছি, তাকে সন্ধ্যায় নেয়া (গ্রেপ্তার) হয়েছে, পরে তাকে অন্তরীণ (কারাগারে পাঠানো) করা হয়েছে। ঢাকা এসে দেখি তার এখনও মুক্তি হয়নি। এটা কী শুরু করেছে? একটা সভ্য দেশকে সুন্দরবন বানাতে চাচ্ছে নাকি?’

‘না, সুন্দরবনকেও অপমান করা হয়। এটা জঙ্গল বানানো হচ্ছে। যা এই সরকার করছে তা তো জানোয়াররাও করে না। বিনা কারণে কেন সরকার এসব করছে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে এদের। আমি মনে করি সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সংবিধানের আছে দেশ শাসন করার সময় যাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়, তাদের দ্রুত পরীক্ষা করাতে হয়। আমি বলি বোর্ড গঠন করে সাইকিয়াট্রিক দ্বারা এদের পরীক্ষা করা হোক।’

ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, ‘কী আশ্চর্য! মইনুল হোসেন আইনজীবী। এই সরকার খুব ভালোভাবে তাকে চেনে। গতকাল রাতে সিলেটে শুনে আমি অবাক। ওনাকে জেলে নেওয়া হয়েছে। এখানে এসে দেখি উনি এখনও জেলে। তিনি কেন জেলে? কেন, কেন, কেন? এর উত্তর চাই।’

কামাল হোসেন বলেন, ‘এ সরকারের নাকি তথাকথিত একটা আইনমন্ত্রী আছে। তোমার (আইমন্ত্রী আনিসুল হক) কাছে আমি উত্তর চাই। তুমি আমাদের একজন জুনিয়র ল’ইয়ার। তোমার বাবা আমার সহকর্মী ছিলেন, সিরাজুল হক বাচ্চু ভাই, উনি আইনজীবী ছিলেন। তুমি কী হয়ে গেছো? তুমি আইন সব ভুলে গেছো? এসো তোমার সাথে আমরা আইনের বই দেখবো। কোন গ্রাউন্ডে মইনুল হোসেনকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে, কৈফিয়ত চাই। গণতন্ত্র যখন দাবি করে জনগণকে কৈফিয়ত দিতে হবে। দায়িত্ব আছে তোমার (আইনমন্ত্রী)। বলতে হবে তোমার।’

‘মইনুলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা চরম স্বৈরতন্ত্রের পরিচয় দিয়েছে। এটা গণতন্ত্র নয়। বোঝাও তুমি গণতন্ত্র মানে যা ইচ্ছা তা নয়। সংবিধানের এমন ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হয়নি। যে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে। মইনুলকে অপমান করে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? কী অপরাধ করেছে সে? এটা মানহানির মামলা। মানহানির মামলায় তো সে জামিন নিয়েছে। আর কত মামলা করবে? এটা অত্যন্ত লজ্জাকর।’

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে বলছি, কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন না- সবাই মামলা করো। আইনমন্ত্রী তুমি যার (প্রধানমন্ত্রী) চাকরি করছো তাকে বোঝাও। এভাবে কথা বলা যায় না। তাকে বোঝানোর ক্ষমতা না থাকলে আমরা সাহায্য করবো। বই খুলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তোমাকে দেখাবো। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে এসব দেখতে হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য বড় শাস্তি। এটা আমাকে দেখতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে। আমার এক বন্ধু সিনিয়র আইনজীবী আমাকে বলেছে, আওয়ামী লীগের নামে যা হচ্ছে তাতে কি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে?’

ড. কামাল বলেন, ‘আইনমন্ত্রী তুমি মনে হয় সব ভুলে বসেছো। তুমি শপথ নিয়েছো সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনার। তুমি যার চাকরি করছো তিনিও শপথ নিয়েছেন। তোমাদের শপথের প্রত্যেকটা শব্দের ব্যাখ্যা আমাকের বোঝাও। আইনমন্ত্রী আমাকে তুমি বোঝাও। আমি তোমার কাছে সময় চাই। আমাকে বোঝাও হচ্ছেটা কী দেশে। পার্লামেন্ট নাকি আছে। তথাকথিত একটা পার্লামেন্ট নাকি আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তোমরা কৈফিয়ত দাও। আরও দুই দিন পার্লামেন্ট আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তুমি কৈফিয়ত দাও। পার্লামেন্টের কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে। সেখানে বল যাতে মানুষ জানতে পারে।’

‘যেসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তা সংবিধানের কোথায় আছে। আমি সিলেটে যা দেখেছি অবাক কাণ্ড। আমাদের হোটেলের সামনে থেকে আটটা/দশটা করে ছেলে ধরে নিয়ে গেছে। কেন নিয়ে গেছে? কী শুরু হয়েছে, এটা বাংলাদেশ?’

নবগঠিত জোটের প্রধান বলেন, ‘মানহানির মামলায় রাতে গ্রেপ্তার করতে হবে এমন কোনো নিয়ম আছে? জামিনযোগ্য মামলা। আইনমন্ত্রী অন্য কিছু না জানলেও তুমি তোমার বাবার সঙ্গে ক্রিমিনাল প্র্যাকটিস তো করেছো। জামিনযোগ্য অপরাধ কী তুমি তা জান। যার চাকরি কর তাকে বোঝাও যে জামিনযোগ্য অপরাধ এটা।’

মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে এ ঐক্য করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী চোখ খোলো। দেশের অবস্থা বোঝার চেষ্টা কর। অন্ধকারে থাকা যাবে না।’

জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ, সুব্রত চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এস এম কামালউদ্দিন, শাহ আহমেদ বাদল, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গোলাম মোস্তাফা খান প্রমুখ।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক খান, মহসিন মিয়া, ইকবাল হোসেন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, গোলাম রহমান ভুইয়া, গোলাম মোস্তাফা, গাজী কামরুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, এ কে এম এহসানুর রহমান, কাজী জয়নাল, মির্জা আল মাহমুদ, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, সগীর হোসেন লিয়ন, শরীফ ইউ আহমেদ, শেখ তাহসীন আলী, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।