সাক্ষরতার হার নিয়ে সরকার-বিশেষজ্ঞদের মতপার্থক্য
পড়ালেখা জানেন না, সরকারের হিসাবে এ সংখ্যা ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে এমন তথ্য প্রকাশ করা হলেও দেশের অর্ধেক মানুষই নিরক্ষর বলে দাবি করেছেন গণসাক্ষরতা অভিযানের চেয়ারম্যান রাশেদা কে চৌধুরী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, সরকারের দেয়া নিরক্ষরতা হারের তথ্য সঠিক নয়। এখনও প্রায় অর্ধেক মানুষ সাক্ষরতার বাইরে রয়েছেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিধানের আলোকে সাক্ষরতা বলতে যারা লিখতে-পড়তে ও সাধারণ অংক করতে পারেন তারাই স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। সেই অনুযায়ী গণসাক্ষরতা অভিযানের জরিপে বর্তমানে ৫৪ শতাংশ মানুষ স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। আর ২৮ শতাংশ মানুষ পরিপূর্ণ শিক্ষার আলো পেয়েছেন।
‘সরকার কিসের ওপর ভিত্তি করে এমন পরিসংখ্যান দিয়েছে তা বুঝতে পারছি না’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৬ সালের পরিসংখ্যানে সাক্ষরতার হার দেখায় ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ সরকার বলছে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, সরকার সাক্ষরতা কার্যক্রমে গুরুত্ব দিলেও এ বিষয়ে কোনো বাজেট বরাদ্দ দেয়নি। সাক্ষরতার হার বাড়াতে প্রকল্প ভিত্তিক নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অথচ প্রকল্প শেষ হলে তা অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ফলে উল্লেখযোগ্য সফলতা আসছে না। শুধু সাক্ষরতা নয়, সঙ্গে কর্মমুখী শিক্ষা ও কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই দ্রুত সাক্ষরতার হার বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
আগামী ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হবে। দিবসটি পালনে সরকারিভাবে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে বুধবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস- ২০১৭’ পালন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের আয়োজন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কোর এবারের থিম ‘লিটারেসি ইন এ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ এর সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ‘সাক্ষরতা অর্জন করি, ডিজিটাল বিশ্ব গড়ি’ শ্লোগানে দিবসটি পালন করা হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটাসটিকস ২০১৬’ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে এখনও ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর।
এসব নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান দিতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিএনইএফ) এবং বর্তমান উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই) ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতার আওতায় এনেছে।
‘নাগরিকের সাক্ষরতার জ্ঞানার্জন সংবিধানিক অধিকার’ উল্লেখ করে শিক্ষাবিদ কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ বলেন, দেশের সকল মানুষকে সাক্ষরতার অধিকার দিতে হবে। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার অনেক সফলতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, শতভাগ সাক্ষরতা বাস্তবায়ন কঠিন কাজ। তবে প্রতিনিয়ত নিরক্ষরতার হার কমে আসছে। আশানুরূপ ফল পেতে নীতিমালার আলোকে অষ্টম শ্রেণিস্তর পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বত্র বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। এতে ঝরে পড়ার হার কমে যাবে। পাশাপাশি শিশুদের বাড়তি পরীক্ষার বোঝা কমাতেও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।
সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে প্রতিনিয়ত সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। আমরা এ পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা ও কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্যতা নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন