নিয়োগ বাণিজ্য

সাতক্ষীরার তালা ক্ষিণ মাছিয়াড়া মাদ্রাসায় নিয়োগের আগেই প্রার্থী চুড়ান্ত!

সাতক্ষীরার তালায় দক্ষিণ মাছিয়াড়া দাখিল মাদ্রাসায় নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চুড়ান্তের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার সভাপতি এরফার মোড়ল ও সুপার আজিজুল ইসলাম পারিবারিক ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে এসকল পদে নিয়োগের নীল নক্সা তৈরী করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে সভাপতির পুত্র ইব্রাহীম মোড়ল কে নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে সুপার আজিজুলের ফুপাতো ভায়ের স্ত্রী জেসমিন খাতুনের নিয়োগ প্রায় চুড়ান্ত। এখন শুধু ঘোষনা বাকি।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ সহ অবিভাবকবৃন্দ ফুঁসে উঠেছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসি।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত জুলাই’২২ সালে মাদ্রাসাটি এমপিও ভূক্ত হয়। মাদ্রাসা তৈরী শুরু থেকে অনিয়ম দূর্ণীতি জেকে বসেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শুরু থেকে যে সকল শিক্ষকগণ এখানে চাকরী করতেন তাদের কে বাদ দিয়ে ভূয়া নিয়োগ বোর্ড দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য ও আত্মীয় করণের মাধ্যমে সুপারের শ্যালকের স্ত্রী খাদিজা আক্তার লিমা, তার বোন জামাই আজিজুল ইসলাম, নিকট আত্মীয় জেসমিন খাতুন ও সভাপতির মেয়ে সেলিনা আক্তর কে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এরপর ২০২৪ সালের ৩১ মে একটি জাতীয় পত্রিকা ও একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুটি পদে স্থানীয় চুাকরী প্রত্যাশীরা আবেদন করেন।

এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে আবেদনকারী নাজমুল সরদার, শারমীন বেগম, রেজাউল গাজী ও আব্দুস সবুর বলেন, আবেদন করার পরে জানতে পারি, নিরাপত্তা কর্মী পদে সভাপতির ছেলে ইব্রাহীম মোড়ল ও আয়া পদে সুপারের ফুপাতো ভায়ের স্ত্রী জেসমিন খাতুন কে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিক্ষা অফিস সহ সকল দপ্তরকে ম্যানেজ করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ভিগ্ন করতে তাদের পক্ষের লোকদের দিয়ে আবেদন করিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসির প্রতিরোধের মুখে বারবার চেষ্টা করেও নিয়োগ বোর্ড বসাতে ব্যার্থ হচ্ছেন তারা।

এলাকার গোলাম রব্বানী, সিরাজুল ইসলাম সহ অনেকেই বলেন, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা বারী আবু বক্করের মামা বর্তমান মাদ্রাসার সভাপতি। প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি ও সুপার মিলে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই দুই পদে নিয়োগ প্রদানের সকল নীল নক্সা তৈরী করেছেন। সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে প্রার্থী চুড়ান্ত করা হয় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তারা।

তারা জানান, মাদ্রাসা এমপিও হওয়ার পরে সুপারের শ্যালকের স্ত্রী খাদিজা আক্তার লিমা, তার বোন জামাই আজিজুল ইসলাম, নিকট আত্মীয় জেসমিন খাতুন ও সভাপতির মেয়ে সেলিনা আক্তর কে মাদ্রাসায় দেখা গেলেও শুরু থেকে তাদের কখনো মাদ্রাসায় দেখা যায়নি। অর্থের বিনিময়ে অবৈধ ভাবে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসকল অনিয়ম ও দূর্ণীতির প্রতিকারে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

সুপার আজিজুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ভাবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আগে থেকেই তাদের নিয়োগ দেয়া ছিল তবে তারা মাদ্রাসায় ঠিকমতো আসতো না। এমপিও ভূক্তির পর থেকে তারা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। দুটি পদে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, কাকে নিয়োগ দেয়া হবে আমি জানি না। এবিষয়ে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ব্রিগেডিয়ার আবু বক্কর সাহেব ভালো বলতে পারবেন।

অত্র মাদ্রাসার সভাপতি এরফান মোড়ল বলেন, এবিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। নিয়োগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধান্ত নিবেন। এমনকি কবে নিয়োগ হবে তাও জানা নেই।

নিয়োগের আগে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেখ ফিরোজ হোসেন বলেন, কাদের কে নিয়োগ দেয়া হবে আমার জানা নেই। বিধিমোতাবেক বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হবে।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিগেডিয়ার বারী আবু বক্করের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।