সাতক্ষীরায় কালো টাকা সাদা করতে শপিং ভ্যালী কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কৌশল
কালো টাকা সাদা করতে এবার মালিক পরিবর্তনের পায়তারা করছে সাতক্ষীরার তালা সদরের শপিং ভ্যালী নামধারী ভুইফোড় প্রতিষ্টানের ম্যানেজার জহর আলী সরদারের নেতৃত্বে সুবিধাভোগী কয়েকজন। প্রশাসন ও গণমাধ্যমের চোখ ফাঁকি দিতে এবার স্বয়ং মালিককে পরিবর্তন করার চেষ্টায় নেমেছে তারা।
গত বুধবার(২৯ মার্চ) র্যাব- ৬ সাতক্ষীরার নেতৃত্বে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই প্রস্তুত ও বিএসটিআই এর ভুয়া নিবন্ধন নাম্বর ব্যবহার করার দায়ে পঁচিশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। একই সাথে প্রতিষ্টানটি বন্ধ করে দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।
প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে ব্যবহারিত কালো টাকা ঢাকতে প্রকৃত অর্থ যোগানদাতা সৌদি প্রবাসী সবুজকে পর্দার আড়ালে নিয়ে কোম্পানির মালিক বানিয়েছে প্রবাসী সবুজের বোন জেসমিন আক্তার লিপিকে। ৩৪ বছর বয়সী প্রবাসী সবুজ তার অবৈধ কালো টাকার আইনী মারপ্যাচ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তার বোন জেসমিন আক্তার লিপিকে প্রকাশ্যে এনেছেন।
সৌদি প্রবাসী সবুজ বিক্রমপুরের আজিজুল হকের ছেলে। অপরদিকে জেসমিন আক্তার লিপি সবুজের আপন বোন। লিপি থাকেন ঢাকার মতিঝিল মিশন রোড এলাকায়।
এদিকে, খবর নিয়ে জানা গেছে জেসমিন আক্তার লিপি পেশায় গৃহিণী। গৃহিণী হয়ে কিভাবে এখানে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয় ওই কোম্পানির ম্যানেজার জহর আলী সরদার।
এ প্রসঙ্গে জহর আলী সরদার গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের কোম্পানির মালিক জেসমিন আক্তার লিপি তিনি ঢাকার মতিঝিলে থাকেন। তিনি কখনো এই প্রতিষ্ঠানে আসেনি, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সব কিছু মনিটরিং করেন তিনি। সকল টাকা মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে পাঠান।
একজন গৃহিণী কয়েক কোটি টাকা কোথায় পেয়েছে এই প্রশ্নের কোন সন্তষজনক জবাব দিতে পারেনি জহর আলী সরদার।
এদিকে, প্রকৃত মালিক সৌদি প্রবাসী সবুজের বিষয়টি পর্দার আড়ালে ঢেকে রাখার চেষ্টা করলেও ইতোমধ্য বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্ট এর আড়ালে রয়েছে চায়ের ব্যবসা, ঘি ব্যবসা, মধু ব্যবসা ও ঘের ব্যবসা। মূলত এই সকল ব্যবসা লোক দেখানো মাত্র। হুন্ডি ব্যবসা ও স্বর্ণ পাচারের মাধ্যমে উপার্জিত কালো টাকা সাদা টাকায় পরিণত করতে সৌদি প্রবাসী সবুজ এখানে দফায় দফায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান করেছে। ইনভেস্ট করা অর্থের অধিকাংশ লোকসানের খাতে গেলেও সেটা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই প্রবাসী এই যুবকের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ব্যবসার সামগ্রিক টাকা আসে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব থেকে। সৌদি আরবে অবস্থানরত সবুজ নামের বাংলাদেশী শ্রমিক সমস্ত অর্থের যোগান দেন। হুন্ডি ব্যবসা, স্বর্ণের বার পাচারসহ অবৈধ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে সৌদি প্রবাসী এই যুবকের বিরুদ্ধে। তালা সদরের কয়েক ডজন মানুষের সাথে মোবাইল ফোনে পরিচয় রয়েছে প্রবাসী এই যুবকের। রহস্যের বিষয় এই এলাকায় অনেকগুলো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও সৌদি প্রবাসী এই যুবকের চেহারা দেখেনি কেউ। ইমু’র মাধ্যমে যোগাযোগ করেন তার সমস্ত কর্মচারীদের সাথে। যদি কখনো ভিডিও কল করেন সেক্ষেত্রে প্রবাসী এই যুবক তার মোবাইলের পেছনের ক্যামেরা চালু করে কথা বলেন। এই অঞ্চল জুড়ে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও নিজের চেহারা কেন দেখাতে চায় না এ নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।
অন্যদিকে শপিং ভ্যালি নামে একটি চা এর প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই চায়ের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাঁচজন কর্মচারীকে নতুন মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছে প্রতিষ্ঠানের মালিক সবুজ।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এক নতুন তথ্য, বর্তমান শপিং ভ্যালি সেমাই কারখানার ম্যানেজার পদে রয়েছেন জহর আলী সরদার যিনি পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিন ভ্যানচালক। রাতারাতি আমূল পরিবর্তন হয়েছে তার। প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা যোগ্যতা না থাকলেও নিজেকে পরিচয় দেন কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে।
জাগেছে, প্রবাসী সবুজের সাথে পরিচয় হওয়ার পর রাতারাতি পরিবর্তন ঘটেছে জহর আলী সরদারের। প্রবাসী মালিকের থেকে উপহার পেয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা মূ্ল্যের মোটরসাইকেল। কিনেছেন লাখ টাকার দামি মোবাইল ফোন। নুন আনতে যার পান্তা ফুরাতো তার এমন পরিবর্তন দেখে রীতিমত হতবাক ওই এলাকার জনগণ।
সাতক্ষীরার তালা সদরের আজহারুল ইসলাম জানান, জহর আলী আগে ইঞ্জিনভ্যান চালিয়ে সংসার চালাত। দিনের বেলা ইঞ্জিন ভ্যান চালাতো আর রাতের বেলা বিভিন্ন স্টুডিওতে কাজ করতো কর্মচারী হিসাবে। কিছুদিন ধরে দেখছি জহরের মধ্যে রাতারাতি পরিবর্তন এসেছে। কয়েক লাখ টাকা দিয়ে দামি মোটরসাইকেল কিনেছে, দামি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। জহরের জীবনযাত্রার এত পরিবর্তন দেখে মানুষ রিতিমত আলোচনা করছেন।
সরোজমিন গিয়ে সংবাদকর্মীরা মালিকের সাথে কথা বলতে চাইলে নানা ধরনের অসঙ্গতি প্রকাশ করেন জহর আলী সরদার। এক পর্যায়ে জহর আলী সরদার প্রবাসী মালিকের সাথে কথা বলিয়ে দিতে সম্মতি প্রকাশ করলেও তার মালিক প্রবাসী যুবক সবুজ নিজের চেহারা দেখাতে আপত্তি জানান। সংবাদ কর্মীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হয় প্রবাসী ও যুবক। এক পর্যায়ে সংবাদ কর্মীদের প্রশ্নের কোন যুক্তিসঙ্গত জবাব দিতে না পেরে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী রেজাউল করিম জানান, শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টের নাম শুনেছি। কালো টাকার বিষয়টি নজরে আসেনি। যদি এমনটা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে দুদক সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। পুলিশের যতটুকু দায়িত্ব সেটা পালন করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন