সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা, বন্ধ হলো ৬টি পদে লোক নিয়োগ
সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গভর্নিংবডি গঠনে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। গভর্নিংবডি গঠনে মৃত ব্যক্তিকে ভোটার, পিতা জীবিত থাকতে মাতাকে ভোটার, তিন বছর আগে লেখাপড়া বন্ধ করা বিবাহিত শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ভোটার বানানো, বিধি লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভোট প্রয়োগ, খসড়া ভোটার তালিকা না করে সরাসরি চূড়ান্ত ভোটার তালিকাসহ নানা ছলচাতুরি ও দুর্নীতির অভিযোগে ওই মামলা দায়ের করেছেন আব্দুল মান্নান নামের একজন অভিভাবক।
মাদ্রাসার শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, ২০১৬ সালে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড নানা অভিযোগে মাদরাসার গভর্নিংবডি ভেঙে দিলে দীর্ঘ দুই বছর গভর্নিং বডি ছাড়াই চলেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সেসময় ভেঙে দেওয়া কমিটি গঠন করে ছিলেন বর্তমান অধ্যক্ষ রুহুল আমিন ও সভাপতি দ্বীন আলী। পরবর্তীতে এডহক কমিটি গঠিত হয় এবং সর্বশেষ গত ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর অনিয়মের মাধ্যমে গভর্নিংবডি গঠিত হয়। এই গভর্নিংবডি গঠনে মাদরাসার অধ্যক্ষ নিজেই ভোটার তালিকায় নাম অন্ত:ভুক্ত করেন এবং সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক সদস্য নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন। শিক্ষার্থীর পিতা জীবিত থাকতে মাতাকে, আবার মাতা জীবিত থাকতে মৃত পিতাকে ভোটার বানানোসহ ব্যাপক অনিয়ম করেছেন অধ্যক্ষ রুহুল আমিন। এছাড়া খসড়া ভোটার তালিকা না করে সরাসরি অনুমোদিত সীল লাগিয়ে নোটিশ বোর্ডে একটি ভোটার তালিকা টানানো হয়। যাতে করে কেউ কোন অভিযোগ বা আপত্তি করার সুযোগ না পায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিষ্ট্রার সিদ্দিকুর রহমান, জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেসিনের সভাপতি মাওঃ ওজায়ের হোসেনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, ‘প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা সহকারী প্রধানের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এ দুটি পদ প্রশাসনিক’। আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ নিজেই ভোট প্রদান করে বিধি লঙ্ঘন করেছেন। তারা আরও বলেন, অধ্যক্ষ ভোট প্রদান করা প্রবিধানের ২(দ) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন। এ বিষয়ে মাদরাসার সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১০-১৫ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদেরকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রদত্ত মৃত্যুসনদ সূত্রে জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জেবা খাতুনের পিতা কামাল হোসেন ১০ বছর পূর্বে মারা যায় অথচ তাকে ৬১ নং ভোটার বানানো হয়েছে। শহরতলির খড়িবিলা গ্রামের আব্দুর রহিমের মেয়ে রেহেনা খাতুন বিগত তিন বছর আগে লেখাপড়া করতো। বিয়ের পর সে বিগত তিন বছর ধরে অনুপস্থিত। এক সন্তানের জননী এই রেহেনা খাতুনের পিতা আব্দুর রহিমকেও ভোটার বানানো হয়েছে। আলিম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুনের পিতা আব্দুল গফুর প্রায় ১৩ বছর পূর্বে এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। তাকেও ভোটার বানানো হয়েছে। এরকম অসংখ্য ভুলে ভরা এবং ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, নিয়ম অনুযায়ী গভর্নিং বডি গঠনের সিদ্ধান্তের তারিখে যারা বৈধ শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকরাই ভোটার হবেন। ঐ মিটিংয়ে অধ্যক্ষকে একটি ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরীর অনুরোধ জানানো হলেও তিনি তা করেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদি অভিভাবক আব্দুল মান্নান বলেন, অনিয়ম করে এবং গোপনে পকেট কমিটি গঠন করে অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় ৬টি পদে লোক নিয়োগে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছে। পকেট কমিটির মাধ্যমে পাতানো নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ৬টি পদে অন্ততঃ অর্ধকোটি টাকা বাণিজ্যের মিশনে নেমেছেন। তাই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে প্রতিকার দাবী করে মামলা করেছি। বাদির ভাই অভিভাবক সদস্য আবুল কাশেম জানান, এই মামলায় মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাদরাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ১৯জনকে বিবাদি করা হয়েছে। এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের ৬ জন শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগের কার্যক্রম শেষের দিকে। হঠাৎ মামলা হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে অধ্যক্ষ কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মোঃ রুহুল আমিন জানান, করোনাকালীন দ্রুত কাজ করতে কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদ্রাসায় ৬টি পদে লোক নিয়োগ করা হবে। মাদ্রাসার উন্নয়নে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু আদালতে মামলা হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ আছে।
তিনি আরও বলেন, খুব তাড়াতাড়ি মামলা নিষ্পত্তি হতে পারে।
নিয়োগে অর্থ লেনদেন হচ্ছে এমন অভিযোগ তিনি এড়িয়ে যান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন