সারা বছর ফলনশীল সুস্বাদু কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন
কাঁঠাল চাষে বীজ থেকে চারা উৎপাদনের মাধ্যম ছিল আমাদের দেশীয় প্রচলিত পদ্ধতি। অনাদিকাল ধরে এ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে আসছে চাষিরা। চারা থেকে বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে কাঁঠাল চাষে ফল আসতে লেগে যেতো প্রায় ৭ বছর। আর মাতৃ গুনাগুনও ধীরে ধীরে কমে যেত। কিন্তু কাঁঠাল গাছে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে মাতৃ গাছের কাঠালের সমগুনাগুন সম্পন্ন এবং কম সময়ে সারা বছর ধরে অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) গবেষক।
কাঁঠাল চাষে নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয় মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে কাঁঠালের গ্রাফটিংয়ে সফল হয়েছেন। এর ফলে মাত্র তিন বছরেই গাছে মিলবে কাঁঠাল। দেশীয় বিভিন্ন জাতের কাঁঠালের মাতৃগাছের গুনাগুনও থাকবে অক্ষুণ্ণ। এছাড়া এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জাতে সারা বছর ধরেই কাঁঠাল পাওয়া যাবে।
বারি’র কৃষি বিজ্ঞানীরা এমন পদ্ধতিতে সফল হওয়ার পর এখন কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কৃষি গবেষকদের দাবি, কাঁঠালে গ্রাফটিংয়ের সফল ব্যবহার আমাদের দেশে এ চাষ সম্প্রসারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
কৃষি গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জিল্লর রহমান এ পদ্ধতির গবেষক। এছাড়াও তিনি দেশে কাঁঠাল চাষ সম্পসারণে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন অমৌসুমী জাতের কাঁঠালের জাত সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগটাও তিনি নিয়েছেন। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জাতে সারা বছর ধরেই কাঁঠাল পাওয়া যাবে। তিনি লাল কাঁঠাল জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণেও কাজ করছেন।
কৃষি গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের ফল বিভাগ ও উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টির ব্যবহার নিশ্চিতে বিভিন্ন ফল ও ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে সরকার জোর দিয়েছে। একইসাথে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বল্প সময়ে ভালো ফলনের প্রতিও। বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণার ফসল হচ্ছে এ গ্রাফটিং পদ্ধতি। ইতিপূর্বে আম ও লিচুর ক্ষেত্রে এ গ্রাফটিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়েছে। আর এখন শুরু হয়েছে কাঁঠালে।
এরই মধ্যে দেশীয় গবেষক ৩টি কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২ ও বারি কাঁঠাল-৩ ইতিমধ্যেই কৃষকদের মাঝে প্রদর্শনী হয়েছে। কয়েক বছরেই এসব গাছে ফল আসতে শুরু করেছে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা গ্রাফটিংয়ে চার ধরনের পদ্ধতির ব্যবহার করছেন। ক্লেফট গ্রাফটিং, এপ্রোচ গ্রাফটিং, এপিকোটাল গ্রাফটিং ও ভিনিয়ার গ্রাফটিং। গাজীপুর, ময়মনসিংহ, খাগড়াছড়ি ও নরসিংদী জেলার ১২০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা মাঠে সফলভাবে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়েছে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে তৈরিকৃত প্রায়শত কাঁঠালের চারা। এছাড়াও আমাদের দেশে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা শত বছরের ঐতিহ্য অমৌসুমী জাতের কাঁঠাল গাছ অনুসন্ধান করে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে তা ধরে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতে রক্ষা হবে আমাদের কাঁঠালের ঐতিহ্য।
কাঁঠাল গবেষক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের জাতীয় এই ফল একটি সময় অবহেলায় ছিল। আর এখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের পথ খুলেছে। কাঁঠালকে ঘিরেই বাণিজ্যিকভাবে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কাঁঠালের গ্রাফটিং পদ্ধতির দিকে কৃষকদের উৎসাহ তৈরি করতে হবে। এ পদ্ধতির ফলে রোপণের কিছুদিনের মধ্যেই ফল পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এলাকাভেদে এর স্বাদেরও ভিন্নতা রয়েছে। বীজ থেকে চারা উৎপাদনে গুনাগুন ঠিক থাকে না। গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করলে শতভাগ গুনাগুন অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে দাবি তার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন