সিজদায় অবনত চিত্তে মাগফিরাত কামনার মাধ্যমে শুরু হোক নববর্ষ ২০২১

পুরাতন বর্ষকে বিদায় দিয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানানোর উৎসব ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’। নতুন বছরটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত একটি বছরের পর্যালোচনা ও নতুন এক বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা সচেতন মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব।
অথচ ধর্মীয় মূল্যবোধকে পদতলে দিয়ে বছরের শেষ দিনে এভাবে আমদানিকৃত পশ্চিমাদের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে থার্টিফাস্ট নাইটের অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখি। যেটা কোন সৌখিনতা কিংবা আগামীর প্রতি সৌহার্দতার কোন লক্ষণীয় নয়।

ইংরেজি নববর্ষের সঙ্গে মুসলমানদের তেমন সম্পর্ক নেই বিধায় নববর্ষ পালন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণকর না।
খৃস্টানদের অনুকরণে ইংরেজি বছর শেষে নতুন বছরের শুরুতে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ (১২টা ১ মিনিট) পালন করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এ রাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অশ্লীলতা-নগ্নতা ও বেলেল্লাপনার বন্যায় মেতে উঠে অনেকে। যা ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ।

ইসলামী শরীয়তে নৈতিকতাহীন ক্রিয়া কর্মের অশ্লীল উপভোগ নেই। বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও নোংরামীকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইংরেজি নববর্ষ তথা ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ ইসলামে অবৈধ। এটা খৃষ্টানদের সংস্কৃতি।

থার্টি ফার্স্ট নাইট এ ধরনের বিজাতীয় সংস্কৃতি উদযাপন থেকে বিরত থাকতে কোরআন ও হাদিসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-
وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ
‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া (ইসলামি রীতিনীতি) অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। (সূরা আল ইমরান)।

বারোটা মাসে বিভাজন তো আল্লাহ তায়ালার তাও দুনিয়া সৃষ্টির দিন থেকে যেমন আল্লাহ বলেন-
اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللّٰهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِیْ كِتٰبِ اللّٰهِ یَوْمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ
‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারোটি।’ (সুরা আত-তাওবা)।
তিনি আরো বলেন:
هُوَ الَّذِیْ جَعَلَ الشَّمْسَ ضِیَآءً وَّ الْقَمَرَ نُوْرًا وَّ قَدَّرَهٗ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوْا عَدَدَ السِّنِیْنَ وَ الْحِسَابَؕ مَا خَلَقَ اللّٰهُ ذٰلِكَ اِلَّا بِالْحَقِّۚ یُفَصِّلُ الْاٰیٰتِ لِقَوْمٍ یَّعْلَمُوْنَ
‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং উহাদের মঞ্জিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এ সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।’ (সুরা ইউনূছ)।

বিজাতীয় সংস্কৃতি পালনে নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন-
“‏ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‏”‏ ‏.
‘যে অন্য জাতির সঙ্গে আচার-আচরণে, কৃষ্টি-কালচারে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত বিবেচিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ)।

অতএব বিজাতীয় সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল বর্ষবরণে যদি কিছু করতেই হয় তো, এই রাতে অনুশোচনা ও আত্মসমালোচনা করে আগামী বছরের কল্যাণ কামনা করত: সিজদা অবনত চিত্তে অতীতের গুনাহ মাফের আশা নিয়ে তওবাহ, ইস্তেগফার, দোয়া- দুরুদ, নফল নামাজসহ ইত্যাদি ভালো কাজের মধ্যে রাতটি অতিবাহিত করা।কারণ বান্দা আর আল্লাহপাকের নৈকট্যের মিলনস্থল হল সিজদা,যেখান বান্দার দুয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী।

পরিশেষে এ আরজ – আসুন আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি নিজেকে গুনাগার বান্দার লিস্ট থেকে মুক্ত রাখতে।হাজার মেঘের ভীড়ে রঙধনুর সাত রঙে বিমুগ্ধ করে স্নিগ্ধ সুন্দর মধুময় করে তুলি আগত দিনগুলো তথা নতুন বছর সবার জীবনে।

লেখক:
মাওলানা আসাদুজ্জামান ফারুকী
সাংবাদিক, লেখক ও প্রভাষক-
সামটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসা, শার্শা, যশোর।