সিনহার অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা জমা, দুই ব্যবসায়ীর স্বীকার
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা জমা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা। বাড়ি বিক্রির চার কোটি টাকা দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের সোনালি ব্যাংকের প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে বলে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করলেও এসব কিছুই করেছেন বিচারপতি এস কে সিনহার পিএস রঞ্জিত সাহার কথা মতো।
দুদকের তলবি নোটিশ পেয়ে রবিবার সকাল ৯টার দিকে দুই আইনজীবীসহ সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন তারা। দুদকের তলবে হাজির হয়ে তাঁরা ১৭১ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দিয়েছেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আইনজীবীসহ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে নেওয়া হয়। পরে আইনজীবীরা ফিরে এসে দুদকের অভ্যর্থনা কক্ষে অপেক্ষা করেন। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁদের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ, ফারমার্স ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিএনহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তা স্থানান্তর করা হয়।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার সঙ্গে দুদক কার্যালয়ে আসা দুজন আইনজীবী আফাজ মাহমুদ রুবেল ও নাজমুল আলম সাংবাদিকদের কাছে দাবী করের- দুটি পে- অর্ডারের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির অ্যাকাউন্টেই ওই টাকা জমা হয়েছে।
আইনজীবীদের দাবি, এস কে সিনহার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ৬ তলা বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরুর দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শান্তি রায় ৬ কোটি টাকায় কেনার জন্য বায়না করেন। ওই বছরের নভেম্বরে বাড়িটির দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। শান্তি রায় সাবেক প্রধান বিচারপতির ‘কথিত পিএস’ রঞ্জিতের স্ত্রী। বায়না করার পর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ৫৫ লাখ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণের সময় নেওয়া আরও এক কোটি ৪০ লাখসহ মোট এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় ফারমার্স ব্যাংকের পে-অর্ডারের মাধ্যমে।
দুজন আইনজীবী আরো বলেন, বাড়ি কিনতে বাকি ৪ কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নিরঞ্জন ও শাহজাহান ২ কোটি টাকা করে মোট ৪ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে শান্তি রায় জামিনদার হন। জামিনদার হিসেবে টাঙ্গাইল ও ঢাকার আশে-পাশের বেশকিছু জমি বন্ধক রাখেন শান্তি।
এদিকে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত নিরঞ্জন ও শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিরঞ্জন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কৃষিকাজ করেন। চাচা রঞ্জিতের কথামতো তাঁকে সহায়তার জন্য ঋণ নিয়েছেন। শাহজাহান জানান, রঞ্জিত তাঁর বন্ধু, টাঙ্গাইলের ধরবাড়ী এলাকায় তাঁর দোকান রয়েছে। রঞ্জিতের কথামতো ঋণ নিয়ে তাঁকে সব টাকা দিয়ে দিয়েছেন। রঞ্জিত সে টাকা কাকে দিয়েছেন সেটা তিনি জানেন না। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক সূত্র জানায়, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে আরও কি কি ধরণের অপরাধ হয়েছে সেগুলো যাচাই বাছাই ও বিশ্লেষণ শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালি ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার মাধ্যমে চার কোটি টাকা গ্রহণ করেন। পে-অর্ডারের পরে ২৪ নভেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি শান্তি রায়কে বুঝিয়ে দেন।
জানা গেছে, মোঃ শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর ৬ নবেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দুটি ঋণ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। দুটি অ্যাকাউন্টের তথ্য ফর্মেই বর্তমান ঠিকানা হিসেবে লেখা রয়েছে প্রধান বিচারপতির উত্তরার বাড়ির ঠিকানা (সেক্টর ১০, সড়ক নম্বর ১২, বাড়ি নম্বর ৫১)। দুই জনেরই স্থায়ী ঠিকানা প্রধান বিচারপতির সাবেক পিএস রঞ্জিতের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি এলাকায়। রঞ্জিত সাহা বর্তমানে সিঙ্গাপুর প্রবাসী। সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে তিনি প্রধান বিচারপতির উত্তরার বাড়িতেই থাকতেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন