সিলেটে আগাম বন্যার আশঙ্কায়!! হাওরজুড়ে কৃষকের ব্যস্ততা
সিলেটে আগাম বন্যার আশঙ্কায় হাওরজুড়ে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাসের খবর পাওয়ার পর কৃষকের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। আগে বাগে থেকে ধান তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, ধলাই ও সারিসহ বিভিন্ন নদনদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ভারতে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির ফলে সিলেটের নদ-নদী গুলোয় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা নদীর পানি শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ দশমিক ০৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আমলশীদ পয়েন্টের পানিও বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। এদিকে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার নয়াবাড়ি,ফুলবাড়ি, কেন্দ্রী, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১ নম্বর লক্ষীপুর, ২ নম্বর লক্ষীপুর, আমবাড়ি, ঝিঙ্গাবাড়ি, কাঠালবাড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার কৃষক। একই অবস্থা জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জেও। নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে হাওরের বোরো ধান। এতে কৃষকদের মধ্যে ফসল হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, তারা সুরমা নদীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পাহাড়ি ঢলের কারণে এ পানি বেড়েছিল। এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। পানি নেমে যাবে।
দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের সম্মেলনে এবার এ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের উজানে ভারতের রাজ্য গুলোতেও বৃষ্টি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে আগামী বর্ষায় দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে এবার বর্ষা শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলেই মত আবহাওয়াবিদদের।
দিকে আগাম বন্যার আশঙ্কায় সিলেটে বিভাগের কৃষকরা ক্ষেত থেকে ধান তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে হাওরে ধান কাটতে ৮৭০টি কম্বাইন হার্ভেস্টর ও ২০০টি রিপার যন্ত্রের সঙ্গে কাজ করেছেন প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক। প্রতিদিন গড়ে একটি হার্ভেস্টর ১শ জন শ্রমিকের ও রিপার ২০ জন শ্রমিকের ধান কাটতে পারে। কৃষি বিভাগের মতে হাওরে ১ লাখ ৯০ হাজার নিয়মিত কৃষি শ্রমিক, ৩০ হাজার অনিয়মিত শ্রমিক ও বাইরের জেলার আরো প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকসহ প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিকও ধান কাটছেন। সর্বশেষ তথ্যমতে জেলায় ৯৯ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
কৃষি বিভাগ আরও জানিয়েছে, এবার হাওরে বিআর ২৮, ২৯ বীজ দেওয়া হয়নি সরকারি ভাবে। তাই হাওরে ৮৯, ৯৬, ৮৮, ৯২, বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের আবাদ হয়েছে বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন প্রকৃতি এভাবে ১৫দিন অনুকূলে থাকলে হাওরের শত ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। হাওরের পুরো ধান কৃষক গোলায় তুলতে পারলে গত বারের চেয়ে এবার আরো ১১০ কোটি টাকার বেশি ধান উৎপাদিত হবে। গত বছর ৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৪৯ মে.টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। এবার ৯ লক্ষ ১৩ হাজার মে. টন চাল উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন