সেই ‘কলঙ্কিত’ তাজমহলে ঝাঁড়ু হাতে যোগী
তাজমহলকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিতর্কে থামাতে মাঠে নামলেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বৃহস্পতিবার আগ্রার তাজমহল পরিদর্শনে যান তিনি।
তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির কয়েজন শীর্ষ নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা। তাজমহলের ভিতর ও বাইরের সবকিছু ঘুরে দেখেন যোগী। প্রায় আধাঘণ্টা সময় কাটান তাজমহলে। এর আগে তাজমহলের পশ্চিম দিকের ফটকে স্বচ্ছতা অভিযানে সামিল হন যোগী। ঝাঁড়ু হাতে নিয়ে ১৭ শতকে তৈরি এই অনন্য স্থাপত্য তাজমহল চত্বর পরিস্কারে নামেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে হাত মেলায় বিজেপির প্রায় কয়েক শতাধিক কর্মী, স্বচ্ছতা অভিযানে সামিল হন চিকিৎসক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সমাজের বিশিষ্টরা।
উল্লেখ্য, মমতাজের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেই ১৭ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান ভারতের আগ্রায় এই অনন্য স্থাপত্যটি তৈরি করেন। প্রায় চার শতাধিক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও প্রতি বছরই কয়েক লাখ পর্যটক ভারতে আসেন এটিকে সরাসরি দেখতে।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে তাজমহলকে নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।
বিতর্কের শুরুটা হয় রাজ্য সরকারের পর্যটন পুস্তিকায় তাজমহলের স্থান না পাওয়া। এনিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বিজেপিশাসিত রাজ্য সরকারকে।
ওই বিতর্ক উস্কে দিয়ে রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম বলে বসেন, ‘তাজমহল বিশ্বাসঘাতকরা তৈরি করেছে। এটি ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক। যিনি এটি তৈরি করেছিলেন তিনি তো নিজের বাবাকেই বন্দি করেছিলেন। তাই এইসব ঐতিহ্য বা ইতিহাসের দরকার নেই। আমরা নতুন করেই ইতিহাস লিখব’। বিজেপি নেতার ওই মন্তব্যে দেশজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে।
বিজেপি নেতার ওই মন্তব্যের জেরেই সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খানও পাল্টা মন্তব্য করে বলেন, ‘শুধুমাত্র তাজমহল কেন, সংসদ ও রাষ্ট্রপতি ভবনও দাসত্বের নিদর্শন, তাই এগুলোকেও ভেঙে ফেলা উচিত’।
কয়েকদিন আগেই তাজমহল চত্বরে শিবের গান গাওয়ার অভিযোগ ওঠে হিন্দু সংগঠনের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে তাদের কয়েকজন সদস্যকে পুলিশ আটকও করে।
তারও আগে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য এই স্মৃতিসৌধকে সুন্দর গোরস্থান বলে বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালেন হরিয়ানার ক্যাবিনেটমন্ত্রী অনিল ভিজ। আর গোরস্থান হওয়ার কারণে তাজমহলের মডেল বাসার ভিতরে রাখা অশুভ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এরকম এক পরিস্থিতির মধ্যেই গত সপ্তাহেই মুখ খোলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ‘তাজমহলকে এবং কি কারণে নির্মাণ করেছেন সেটা বড় বিষয় নয়। এটা ভারতীয় শ্রমিকদের রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে তৈরি হয়েছিল’। সেসময়ই তাজমহল পরিদর্শনে যাবেন বলেও আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন যোগী। তাঁর সেই কথামতোই এদিন তাজ পরিদর্শনে আসেন যোগী। মুখ্যমন্ত্রীর তাজমহল সফরকে কেন্দ্র করে আঁটোসাঁটো করা হয়েছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আগ্রা শহর জুড়ে প্রায় ১৪ হাজার পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছিল। শহরে যান চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, যোগী আদিত্যনাথই উত্তরপ্রদেশের প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী, যিনি তাজমহল দেখতে এলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন