সেই ১৫ মিনিটের ফুটেজ দেখতে চান নেপালি শিক্ষার্থীরা

পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নেপালি নাগরিক বিনিশা শাহর মৃত্যুকে রহস্যজনক দাবি করে কলেজটিতে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালের শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে পাইওনিয়নার ডেন্টাল কলেজটির সামনে অবস্থান নেয় তারা। পরীক্ষার হল থেকে ফিরে হঠাৎ বিনিশার আত্মহত্যা, পরীক্ষার হল থেকে তাকে বের করে কোথায় নেওয়া হয়েছিল- এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান নেপালি শিক্ষার্থীরা।

সেই ১৫ মিনিটে বিনিশার সঙ্গে কি ঘটেছিল তা জানতে কর্তৃপক্ষের কাছে ওই সময়টুকুর সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিনিশা শাহকে ১৯ ডিসেম্বর সকালে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে হল থেকে বাইরে নিয়ে যান দায়িত্বরত শিক্ষক। এর প্রায় ১৫ মিনিট পর তাকে এনে আবার পরীক্ষা দিতে বসানো হয়। কিন্তু, পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগেই হল থেকে বেরিয়ে হোস্টেল কক্ষে আত্মহত্যা করেন বিনিশা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনৈতিক টাকা দাবি, জরিমানার ফাঁদ ও অতিরিক্ত চাপে আত্মহত্যা করেছেন বিনিশা।

তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, নেপালি এই শিক্ষার্থীর অতীতের পারফরমেন্স বিবেচনা করে সেদিন তার পরীক্ষা বাতিল না করে তাকে হলে নিয়ে গিয়ে বসানো হয়। কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা জরিমানা করা হয়নি।

বিনিশার নেপালি সহপাঠী রোকসা বলেন, ‘বিনিশাকে সেই ১৫ মিনিটে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কার সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল, আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে আমাদের দেখানো হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে ২০ ডিসেম্বর থেকে সকল সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা দেখতে চাই, সেই ১৫ মিনিটে কি ঘটেছিল?’

ঘটনার দিন বিনিশার সঙ্গে একই হলে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন এমন এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালীন আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে নকলের অভিযোগে বিনিশাকে হল থেকে বাইরে নিয়ে যান। এর প্রায় ১৫ মিনিট পর বিনিশাকে পরীক্ষায় বসিয়ে প্রশ্নের দ্বিতীয় পার্ট লেখার কথা বলেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রশ্নের দুটি পার্টে নির্ধারিত ৭০ নম্বর থেকে পাস করতে হলে ৬০ পেতে হবে। তাহলে ৩৫ নম্বরের উত্তর দিয়ে কখনোই পাস করা সম্ভব নয়।’

ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ সবসময়ই শিক্ষার্থীদের ভুল ধরার চেষ্টায় থাকে। তাই সব শিক্ষার্থীরাই আতঙ্কে থাকে। যেকোনো ভুলের জন্য ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, হয়তো সেই ১৫ মিনিটে তাকে ডেকে নিয়ে জরিমানা দিয়ে পার পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আর সেই কারণেই হল থেকে বেরিয়ে আত্মহত্যা করেন বিনিশা।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের চেয়ারম্যান রকিবুল হোসাইন বলেন, ‘পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের পর বিনিশাকে প্রিন্সিপালের রুমে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কলেজে বিনিশার মতো অনেক নেপালি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের সবাই খুব মেধাবী। বিনিশার অতীত পারফরমেন্সের কথা মাথায় রেখেই তাকে পুনরায় পরীক্ষা দিতে বসানো হয়েছিল। কোনো ধরনের জরিমানা করা হয়নি। হয়তো অপমানবোধ থেকে অথবা পারিবারিক কোনো কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে।’

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাময়িকভাবে কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও জানান চেয়ারম্যান রকিবুল হোসাইন।

বিনিশার লাশ নেপাল পাঠানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া শেষে নেপালি রাষ্ট্রদূত ডিলি আচার্য এবং বিনিশার পরিবারের লোকজনের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। তারপর নেপালে তার মরদেহ পাঠানো হবে।’

বিনিশার ময়নাতদন্তকারী ঢামেকের ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হয়েছে। তবে ভিসেরা ও ডিএনএ টেস্টের জন্য চুল, পায়ের মাসল, ইউরিনের স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। ওই রিপোর্টগুলো হাতে পেলে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া হবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আশরাফুল করিম বলেন, ‘লাশ গ্রহণের জন্য নেপাল থেকে বিনিশার ভাইয়ের শনিবার ঢাকায় আসার কথা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে এবং পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।’-পরিবর্তন ডটকম