সেনাপ্রধানকে নিয়ে ভুল তথ্য, জাফরুল্লাহর দুঃখ প্রকাশ
বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ আজিজ আহমেদকে নিয়ে দেয়া ভুল তথ্যের জন্য সেনাপ্রধানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘টক শোতে আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। এমন ভুল বক্তব্যে ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।’
শনিবার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান তিনি।
একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পরদিন মঙ্গলবার রাত দশটায় বেসরকারি নিউজ চ্যানেল সময় টিভিতে ‘সম্পাদকীয়’ শিরোনামের টকশোতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সেখানে আর্জেস গ্রেনেড প্রসঙ্গে কথা উঠলে বিএনপিপন্থী এই বুদ্ধিজীবী বলেন, বর্তমান সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের জিওসি বা কমাড্যান্ট ছিলেন। সে সময় চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ব্যাপক সংখ্যক সমরাস্ত্র, গোলাবারুদ চুরি বা হারিয়ে বা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এজন্য আজিজ আহমেদের কোর্ট মার্শালও হয়েছিল।
জাফরুল্লাহর এমন বক্তব্যের পর সারাদেশে শুরু হয় তোলাপাড়। সেনাসদর দপ্তর থেকেও এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়।
সেনাদপ্তর থেকে পাঠানো প্রতিবাদে বলা হয়, টকশোতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মন্তব্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন, অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমাড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি সেপ্টেম্বর ২০১০ থেকে জুন ২০১১ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। জুন ২০১১ থেকে মে ২০১২ পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং মে ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
টকশোতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে সময়ের কথা বলেছেন, সেই বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোন সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।
সেদিনের টক শোর ব্যাপারে নিজের অবস্থান জানাতে আজ সংবাদ সম্মেলন করেন ডা. জাফরুল্লাহ।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপিপন্থী এই বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান সামগ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে কী করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলোদেশে শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা স্থাপন করা যায় তা নিয়ে সচেতন নাগরিকের মতো আমিও চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আইনের সংকীর্ণতার কারণে আমার বিকল কিডনি রোগের উত্তম চিকিৎসা সুলভে কিডনি প্রতিস্থাপন বাংলাদেশে সম্ভব নয়। বিধায় জীবনরক্ষার জন্য আমাকে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন চার ঘণ্টা করে হোমাডায়ালিইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিরের পর স্বাভাবিক কারণে শারীরিক দুর্বলতা বাড়ে এবং মানসিক স্থিতি কিছুটা কমে। সময় টেলিভিশনের বিশেষ অনুরোধে শারীরিক দুর্বলতা নিয়েই আমি ৯ অক্টোবর রাত ১০টায় তাদের একটি টক শোতে অংশ নেই।’
আলোচনায় সেনাপ্রধান নিয়ে করা মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমানে সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ‘জিওসি’ ছিলেন না ‘কমান্ডডেন্ট’ও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের এক সময় সময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল হয়নি একবার কোর্ট অব এনকোয়ারি হয়েছিল। ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তিরিক দুঃখিত ও মর্মাহত।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘সেনাবাহিনী বা জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এরূপ কোনও অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হয়েছি এবং যুদ্ধ শেষে আমিও প্রথম কুমিল্লা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি। পরে আমি ও ডা. আজিজুর রহমান ঢাকা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি। জেনারেল আজিজের সম্মান হানি করার কোনও চিন্তা বা উদ্দেশ্য আমার ছিল না। আমি খোলা মনে আরও বলেছিলাম, তার ছোট ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের দায় দায়িত্ব জেনারেল আজিজের ওপর বর্তায় না। চরম দণ্ডপ্রাপ্ত জোসেফের দণ্ড মুক্ত করেছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ খান।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘জেনারেল আজিজকে আমি অসাবধানতাবশত কোনও মনকষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য প্রয়োজন যে আমি ইতিমধ্যে বিগত দুই দিন কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে আমার বক্তব্যে ভুল শব্দচয়ন ও শব্দবিভ্রাটের বিষয় প্রকাশ করে সেনাপ্রধানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। চূড়ান্তভাবে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতেই এই সংবাদ সম্মেলন।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন